হোম আন্তর্জাতিক বরিস জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আদ্যোপান্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি বা রক্ষণশীল দলের আইনপ্রণেতারা অনাস্থা ভোটের আবেদন করার পর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সোমবার (৬ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

অনাস্থা ভোটে হেরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়তে হবে বরিস জনসনকে। তবে ঠিক কী কারণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের আবেদন করা হয়েছে, বরিস জনসন নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের সমর্থন পাবেন কিনা এরইমধ্যে এমন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কেন এই ভোট?

বরিস জনসনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বেশ কয়েকজন কনজারভেটিভ এমপি।

করোনা মহামারির লকডাউনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে এক পার্টিতে অংশ নিয়ে সমালোচিত হন বরিস জনসন। ইতোমধ্যে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। কিন্তু ব্রিটেনের জনগণ তার প্রতি ক্ষুব্ধ বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিরোধী দলের পাশাপাশি নিজ দলেও চরম সমালোচিত হন জনসন। এ নিয়ে গত বছর তার পদত্যাগের দাবি ওঠে। চলতি বছর বরিস সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তাই সংসদে অনাস্থার মুখে পড়লেন তিনি।

এ ছাড়া ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বরিস জনসন।

অনাস্থা ভোট কী?

যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে দেশটির এমপিদের প্রচেষ্টা আস্থা ভোট হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে ভোট আয়োজনের জন্য ‘নেতার ওপর আর আস্থা নেই’ উল্লেখ করে দেশটির বর্তমান অন্তত ১৫ শতাংশ এমপিদের একটি চিঠি লিখে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে।

অর্থাৎ বর্তমান ৩৫৯ জন কনজারভেটিভ এমপির মধ্যে ৫৪ জন এমপি যদি চেয়ারম্যান বরাবর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চিঠি লেখেন বা ই-মেইল পাঠান, তাহলে আস্থা ভোট হিসেবে বিবেচিত হয়।

এ নিয়ম মেনেই সব ব্যাকবেঞ্চ কনজারভেটিভ এমপিদের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদীয় গ্রুপের বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডিকে সম্প্রতি এ চিঠিগুলো পাঠানো হয়। এরপরই অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোণষা দেন গ্রাহাম ব্র্যাডি।

এ ভোটে জিততে হলে বরিস জনসনকে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য কনজারভেটিভ পার্টির ১৮০ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন পেতে হবে তাকে।

বরিস জিতলে কী হবে?

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, বরিস জনসনে এ ভোটে জিতে গেলে টোরি এমপিদের আগামী এক বছরের মধ্যে আর অনাস্থা ভোটের অনুমতি দেওয়া হবে না।

তবে জল্পনা রয়েছে, সরকারকে শিগগিরই আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাধ্য করতে এ আইনে পরিবর্তন আনার দাবি করতে পারেন টোরি এমপিরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় গ্রুপের বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি বলেন, ‘প্রায়োগিকভাবে এটি সম্ভব’।

এ ছাড়া বরিস জনসন যদি অল্প ভোটে জয়ী হন, তবে এটি পার্লামেন্টে তার পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন আছে কিনা তা নিয়ে আবারও ভাবতে বাধ্য করতে পারে।
বরিস হেরে গেলে কী হবে?

জনসন হেরে গেলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হবে। নতুন নেতা নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করবে সংসদীয় গ্রুপের কমিটি।
নেতৃত্বের এ প্রতিযোগিতায় যিনি টিকবেন তিনি শুধু টোরি দলের নেতাই নন, হবেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীও। অর্থাৎ সাধারণ নির্বাচন ছাড়াই নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।

যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে, ভোটাররা একজন ব্যক্তির পরিবর্তে একটি দলকে দেশ শাসন করার জন্য নির্বাচিত করে থাকেন।
যেভাবে বেছে নেয়া হয় নতুন নেতৃত্ব প্রার্থীদের আটজন সহযোগী টোরি এমপির সমর্থন প্রয়োজন হয়। এ আটজন এমপির মধ্যে একজন থাকেন প্রস্তাবক, আর একজন সমর্থনকারী। তবে যদি দুজনের বেশি প্রার্থী দাঁড়ায়, তাহলে কয়েক দফায় ভোটাভুটি হয়।

ভোটের প্রথম রাউন্ডে প্রার্থীদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ৫ শতাংশ (১৮ জন এমপির) ভোট পেতে হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাদের অবশ্যই ১০ শতাংশ (৩৬ জন) এমপির সমর্থন পেতে হবে। এই দুই রাউন্ডে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেয়া হয় পরবর্তী রাউন্ড থেকে।

এরপর বাকি দুই প্রার্থীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে ভোট দেন সারা দেশের কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। এ ছাড়া এই ভোটের আগেই যদি কোনো প্রার্থী নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে অন্যজন বিনা ভোটেই কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
বিবিসি ও গার্ডিয়ান অবলম্বনে

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন