স্পোর্টস ডেস্ক:
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন মেসি। গতকাল লন্ডনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে ঘোষণা করা হয় বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের নাম। তবে এই পুরস্কার নিতে উপস্থিত হননি মেসি। আর্জেন্টাইন মহাতারকা না এলেও মঞ্চ আলোকিত করেছেন ক্রীড়াজগতের অনেক তারকাই। সাবেক ও বর্তমান তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে আলো কেড়েছেন এক নারী ক্রীড়া সাংবাদিকও।
গতকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে ‘ফিফা দ্য বেস্ট’ এর উপস্থাপনায় ছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরি। আর্সেনাল ও বার্সেলোনার হয়ে মাঠ মাতানো এই সাবেক তারকা ফ্রান্সের হয়ে জিতেছিলেন ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপও। তবে অঁরি এদিন একাই উপস্থাপকের ভূমিকায় ছিলেন না। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ ক্রীড়া সাংবাদিক এবং উপস্থাপক রেশমিন চৌধুরী।
রেশমিন চৌধুরী ইউরোপের ক্রীড়ামঞ্চের অতিপরিচিত নাম। ফুটবলের বড় বড় ইভেন্টে উপস্থাপনার কথা এলেই প্রথম যাদের নাম আসবে, তাদরই একজন এই ব্রিটিশ। তবে রেশমিন চৌধুরী নামটাই বলছে ব্রিটিশ নাগরিক হলেও কোথাও একটা ‘কিন্তু’ আছে।
ঠিকই ধরেছেন, রেশমিন চৌধুরীর গায়ে প্রবাহিত হচ্ছে বাঙালি রক্ত। শুধু বাঙালিই নয়, খোদ বাংলাদেশই জড়িয়ে আছে এই ক্রীড়া সাংবাদিক ও উপস্থাপকের পরিচয়ের সঙ্গে। রেশমিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ফুটবলের কুলীন মঞ্চে ফুটবলের মানচিত্রে ছোট্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন।
দ্য বেস্ট এর উপস্থাপনার মঞ্চে রেশমিন এবারই প্রথম নন। এর আগে ২০২০ সালে ডাচ কিংবদন্তি রুড খুলিত এবং ২০২১ সালে জারমেইন জেনাসের সঙ্গেও সহউপস্থাপক হিসেবে ছিলেন তিনি।
৪৬ বছর বয়সী রেশমিনের জন্ম অবশ্য বাংলাদেশে নয়। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিনে অর্থ্যাৎ ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারের দ্বিতীয় জেনারেশনের সন্তান তিনি। নিজের বেড়ে ওঠার ব্যাপারে রেশমিন জানিয়েছিলেন, একটি অত্যন্ত উদাতা ও আধুনিকমনস্ক পরিবারে জন্ম নেওয়ায় শুরু থেকেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, সঙ্গীতের পাঠটা খুব ভালোভাবেই পেয়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতকের পর ২০০৩ সালে হার্লো কলেজে সাংবাদিকতার ওপর স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ। সে সময়েই রয়টার্স টিভির নিউজ হেল্প ডেস্কে অপারেটর হিসেবে সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারের শুরু।
বিবিসি, ব্লুমবার্গ ও আইটিএনে কাজ করার পর ২০০৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে যোগ দেন রেশমিন। ২০০৯ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলে প্রথম সাংবাদিক হিসেবে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনিই। রোনালদো ছাড়াও ফরাসি ভাষায় করিম বেনজেমার এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন তিনি। বাংলা ও ইংরেজি তো পারেনই, তার দক্ষতা আছে স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষাতেও।
উপস্থাপক হিসেবে ক্রীড়া জগতের বৃহৎ ও সম্মানজনক বেশ কিছু ইভেন্টে উপস্থাপনা করার গৌরব অর্জন করেছেন রেশমিন। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত টোকিও অলিম্পিকের প্রধান স্ট্রিমিং পার্টনার ডিসকভারি প্লাস এবং ইউরো স্পোর্টসের অন্যতম উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ২০২২ সালে বেইজিংয়ের শীতকালীন অলিম্পিকেও উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেন রেশমিন।
২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপেও ছিলেন রেশমিন। সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ নির্ধারণী অনুষ্ঠানে বিখ্যাত অভিনেতা ইদ্রিস এলবার সঙ্গে সহউপস্থাপক হিসেবে ছিলেন তিনি।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ নির্ধারণী অনুষ্ঠানেও উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেছেন রেশমিন। ২০১৭ সাল থেকে টান চার বছর এই ভূমিকা পালন করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ। এছাড়া ইউরোপা লিগ ও কনফারেন্স লিগেও বিভিন্ন সময়ে তাকে উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের মা রেশমিন। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের জরিপকৃত ক্রীড়াক্ষেত্রে শীর্ষ ৫০ নারীর বিচারকের তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালে এফসি বিজনেস ম্যাগাজিনের এশিয়ান ফুটবল অ্যাওয়ার্ডে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন রেশমিন। এর দুই বছর পর তিনি এই পুরস্কার জেতেন।
ক্রীড়াজগতের বাইরেও পথচারণা আছে রেশমিনের। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ২০০৬ সালে ‘দ্য নেমসেক’ নামের একটি সিনেমায় গান করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের থিয়েটারে মহাভারত নামের একটি প্রডাকশনে তিনি প্রধান গায়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন।