বিনোদন ডেস্ক:
মিথ্যা, ছল চাতুরি, প্রতারণা,মানুষকে ঠকানো, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা দৈনন্দিন জীবনের এসব ছোট-বড় পাপের পরিণতি আসলে কি। একেক ধর্মে পাপের শাস্তি একেকরকম, পাপের ব্যাখ্যা একেকরকম। এসব পাপের শাস্তি কি পরকালে মিলবে নাকি এ দুনিয়াতেও কিছু রাখা আছে? রিভেঞ্জ অব ন্যাচার, আত্মগ্লানি নাকি প্রায়শ্চিত্ত? এই উত্তরটা বোধহয় কারও জানা নেই। তবে কর্মফল যে সবাইকেই ভোগ করতে হবে এতটুকু নিশ্চিত। আর এই কর্মফলের একটি এক্সট্রিম ধারণা নিয়েই তৈরী হয়েছে অনম বিশ্বাসের ওয়েবসিরিজ ‘ভাইরাস’।
৫ পর্বের এই সিরিজের প্রথম দুই পর্ব খুবই ভালো লেগেছে। এখানেই মূলত অনম বিশ্বাস পাপ করলে তার ফল থেকে যে আপনি বাঁচতে পারবেন না তার থিওরি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আগেই বলে রাখি এই গল্পের সাথে বাস্তবের মিল আপনি শতভাগ পাবেন না। হ্যাঁ সত্যের উপর নির্ভর করেই নির্মিত হয়েছে ‘ভাইরাস’, ঐযে বলছিলাম দৈনন্দিন জীবনের মানুষের ছোট-বড় পাপ, ঠিক তাই এই সিরিজের মূল নায়ক, তবে তা কিছুটা সারকাজম, কিছুটা আধ্যাত্বিক আলোকে বিশ্লেষন করা হয়েছে সিরিজে। চলুন এগোনো যাক পাপ ধরেই।
খুব সহজ একটি উদাহরণ দেখা যাক, আমের সিজন আসার আগেই কিভাবে পাঁকা আম বিক্রি হয় বাজারে বলুন তো? কিংবা বাজার থেকে আপনি টমেটো কিনে আনলেন এক কেজি, দেখছেন দিনের পর দিন কেটে গেলেও কিচ্ছু হচ্ছেনা সে টমেটোর, কিন্তু কিভাবে? ফরমালিন। জ্বী এই ফরমালিন শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমরা এও জানি যে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অধিকাংশ খাবারেই ফরমালিন ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ফরমালিন যে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর সেটাও সবাই জানে। কিন্তু খুব কি পাত্তা দেই আমরা বিষয়টা? না। কে এত মাথা ঘামাবে? থাকুক না একটু আধটু ফরমালিন। তবুও পাঁকা, সুস্বাদু, সুদর্শন খাবারটা যেন পাই। হোক না শরীরের জন্য তা বিষাক্ত। ঠিক এমন সহজ একটা বিষয়কে খুব বেশি এক্সট্রিম ভাবে ভাইরাসের প্রথম পর্বে দেখানো হয়েছে। তবে এই সহজ বিষয়টা যে কতটা মরণঘাতি তাও স্পষ্টভাবে ডার্ক সারকাজমের মাধ্যমেই দেখানো হয়েছে।
এবার আসি পরের পাপ অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তোলা যে কতটা অনৈতিক এবং ভয়াবহ হতে পারে তাই দেখানো হয়েছে এখানে। প্রতিনিয়ত হত্যা থেকে শুরু করে দুর্নীতি সকল ক্ষেত্রেই অপরাধীর পাশাপাশি একদল এমন থাকেন যারা নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলতেই কখনো মুখ খোলেন না। ঐযে ‘আমার কি?!’ আচরণ। তবে এরাও ঠিক একই অপরাধী অপরাধী। সমাজের অধপতনের জন্য এরাও দায়ী।
তৃতীয় পর্বে এসে খেই হারায় ‘ভাইরাস’। ইংরেজী সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ যারা দেখেছেন তারা জানবেন এখানে প্রধান চরিত্র ‘ইলেভেন’র আধ্যাত্বিক যে ক্ষমতা থাকে ‘ভাইরাস’ এও সেই ক্ষমতা সম্পন্ন একটি চরিত্র দেখানো হয়েছে। একে তো হুবহু প্রেজেন্টেশন তার উপর একেবারে কাল্পনিক প্লট আশাহত করে। তবে এখানেও সুন্দর মেসেজ দিতে চেয়েছেন নির্মাতা কিন্তু বিষয়টি রূপকথার গল্পের মত খুব বেশি হালকা লেগেছে।
শেষ দুই পর্বে আশাহত হয়েছি। এখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের খারাপ দিক নিয়ে দর্শককে অবগত করতে চেয়েছেন নির্মাতা তবে সে উপস্থাপন অনেক হালকা লেগেছে। কিছুটা গতানুগতিক থ্রিলার তামিল সিনেমার দুর্বল ভার্সন মনে হয়েছে, যা যারা সিনেমা-সিরিজ দেখেন তাদের জন্য খুব একটা নতুন কিছু না। আর দর্শক হিসেবে নতুন কিছু সবসময় নতুন কিছু দেখার আশা থাকবেই। যেমনটা প্রথম দু পর্বে মনে হয়েছে। অর্থাৎ মেসেজ ভালো দিতে চাইলেও শেষের দিকে হালকা হয়ে যায় গল্প, আর এ ধরণের গল্পে বেশ ইনটেনসিটি ডিমান্ড করে আমার মনে হয়। আমরা বাইরের দেশের অনেক সিনেমা-সিরিজ দেখি যেখানে এই রিভেঞ্জ অব ন্যাচার এবং কারমা অর্থাৎ কর্মফল নিয়ে দর্শককে অবহিত করা হয়েছে। এবং মানুষের বিবেককে জাগ্রত করতে কিংবা সিস্টেমকে কিছুটা নাড়া দিতে এমন গল্পের প্রয়োজন রয়েছে , সে চেষ্টাও করা হয়েছে ভাইরাসে। তবে এই উপস্থাপন আরও শক্তিশালী হলে ভালো লাগতো।
ভাইরাস যে কেবল কোনো অশরীরি জীবাণু নয়, মানুষের মনেও ভাইরাস ঢুকতে পারে এবং তা মহামারীর মতই একটি গোটা সমাজ ও জাতিকে আক্রান্ত করে ফেলে সে বিষয়টি এই সিরিজে দেখানো হয়েছে। গল্পে বেশ কিছু লুপহোল ছিলো বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে। তবে অভিনয়শিল্পী সবাই দারুণ কাজ করেছেন। বিশেষ করে শ্যামল মাওলা ও তারেক আনাম খানের চরিত্রে মানুষ ও তার বিবেকের যে রূপ দেখানো হয়েছে তা ভালো লেগেছে। সেই সাথে এই শক্তিশালী অভিনেতা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।