হোম জাতীয় প্রেমের বিয়ে মানেনি শাশুড়ি, দূরে গিয়েও বাঁচলেন না হালিমা

জাতীয় ডেস্ক:

দীর্ঘ তিন বছরের প্রেম। প্রথম দিকে কোন পরিবারই মেনে নেয় নি। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় হালিমা আক্তার মীম ও জামালের মধ্যে। কিন্তু মনে মনে হালিমার শাশুড়ি হালিমাকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই শুরু হয় বউ শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। বিয়ের চার বছরে তাদের মধ্যে অনেকবার ঝগড়া হয়। দুই পরিবার নিয়ে সালিসও বসে।

এরই মধ্যে মীমের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্র সন্তান জিসান। পরিবারে নতুন সদস্য আসায় মীমের শাশুড়ি যেন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এমনকি কয়েকবার ছোট শিশুটিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করেন তিনি। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

দুমকির সাতানী গ্রামের বাসিন্দা জামাল এক পর্যায়ে কোন উপায় না পেয়ে তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে দুমকির শাহজাহান দারোগার বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মীম ও তার শিশু সন্তান জিসান। জামাল দুপুরের খাবার খেয়ে দুমকি বাজারে তার কর্মস্থল কম্পিউটারের দোকানে চলে যান। এর মধ্যে মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত হঠাৎ বাসায় ঢুকে গৃহবধূ মীমের হাত-পা বেঁধে শরীরে আগুন ধরিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এ সময় মীমের চিৎকার শুনে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে মীমকে উদ্ধার করে। তবে তার আগেই মীমের শরীরের অনেক অংশ পুড়ে যায়। তার সঙ্গে দগ্ধ হয় ছয় মাসের শিশু সন্তান জিসানও।

মীম আগুনে ছটফট করছিল আর বার বার বলছিল, আমকে বাঁচান, আমার সন্তানকে বাঁচান। ওই সময়ই সে দুজন লোক বোরকা পরে এসে তার হাত-পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার কথাটা এলাকাবাসীর কাছে বলে গেছে। তবে তারা কারা ছিল তা চিনতে পারেনি মীম।

মীমকে প্রথমে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (০৯ জুন) বিকেল ৪টার দিকে মীম মারা যান। দগ্ধ শিশুসন্তান জিসান সংকটাপন্ন অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

এ ঘটনায় নিহত মীমের মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে তার শাশুড়ি পিয়ারা বেগমসহ আরও অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জনকে আসামি করে দুমকি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় পিয়ারা বেগমকে (৫২) ওই দিন রাতে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে দুমকি থানা পুলিশ।

নিহত মীমের মামা ওমর ফারুক সময় সংবাদকে বলেন, আমার ভাগ্নিকে তার শাশুড়ি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

নিহত হালিমা আক্তার মীম ছোটবেলা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা মজিবুর রহমান হাওলাদার অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসার জন্য প্রায় ঢাকা যাওয়ার কারণে মীম তার খালু লাল মিয়ার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছে। হালিমা উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

সালিসে উপস্থিত থাকা হালিমার খালু লাল মিয়া বলেন, সালিসে বউ-শাশুড়ির পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর একই বাড়িতে বসবাস কঠিন হয়ে পড়ায় জামাল হোসেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দুমকি উপজেলা শহরের নতুন বাজার এলাকায় আলাদা ভাড়া বাড়িতে ওঠেন।

নতুন বাসার এক প্রতিবেশী জানায়, এদিন দুপুরে বাসায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনতে পাই। ছুটে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি দেয়া। পরে ভেতরে ঢুকে শাড়ি ও ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হালিমা আক্তারকে উদ্ধার করেন। এ সময় তার শিশুপুত্রের হাতসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসানো ছিল। আমরা দুজনকে দ্রুত বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দুজন মুখোশ পরিহিত অবস্থায় ঘরে ঢুকে কাপড় দিয়ে হালিমার হাত, পা ও মুখ বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। এরপর বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে যায়। পিয়ারা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় ও যোগসাজশে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হালিমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত, পা ও মুখ বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হালিমার স্বামী জামাল হোসেন বলেন, আমার কিছু বলার মতো অবস্থা নেই। স্ত্রী মারা গেছে। মাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, আমি চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন হোক।

এ বিষয় পটুয়াখালী পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় তার মামা থানায় একটি মামলা করেছেন। আমরা মামলার ১নং আসামিকে গ্রেফতার করেছি। ঘটনার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

শনিবার (১০ জুন) রাত নয়টায় হালিমা আক্তার মীমের মরদেহ ঢাকা থেকে দুমকিতে এসে পৌঁছায় এবং রাত ৯টায় জানাজা শেষে মীমের বাবার বাড়ি দুমকি উপজেলার সাতানী ৭নং ওয়ার্ডে দাফন করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন