নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় সংকটে ও অব্যবস্থাপনায় চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। ২০২৪ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে চরম বিপর্যয়, অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে টিসি দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেই সাথে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদে পদায়ন আটকাতেও চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন শূণ্য থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এক দিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার বিঘ্ন ঘটছে অন্য দিকে অদক্ষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় চালানোর ফলে বিদ্যালয়ের পরীক্ষীরার ফলাফল ও সার্বিক উন্নয়নসহ শিক্ষার গুণগত মান সর্ব নিন্মস্তরে নেমে এসেছে। ক্লাসে পাঠদান বন্ধ রেখে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ বাস্তবায়ন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকস্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও হচ্ছে ব্যাহত। এতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় সিনিয়র শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করায় এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ বাড়ছে। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুন্য থাকায় বর্তমানে মো. আনিছুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মূল পদ সিনিয়র শিক্ষক। তিনি একাধারে সহকারী প্রধান শিক্ষককের (চলতি দায়িত্ব) পালন করছেন এবং প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করছেন। বিদ্যালয়টিতে পাঠদান ও প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় যথেষ্ঠ বিঘœ ঘটছে। তাছাড়া বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৫ জনের বেশি সিনিয়র শিক্ষক কর্মরত আছেন। যেহেতু মো. আনিছুর রহমান একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরা তার নির্দেশনা যথাযথভাবে আন্তরিকতার সাথে পালন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেননা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, মো. আনিছুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাকে পুতুলের মতো বসিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন একনাগারে একই কর্মস্থলে ১৫ বছর কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন (বাংলা), মো. রবিউল ইসলাম (ভূগোল), হারাধন কুমার আইচ (ইংরেজি) শিক্ষক। আমাদের বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান সিনিয়র শিক্ষকদের ক্লাস টিচারের দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মতাদর্শী ও অনুগত জুনিয়র ও অদক্ষ শিক্ষকদের ক্লাস টিচারদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাদের বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় অব্যবস্থাপনায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং ২০২৪ সালের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলেও চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর দায়ভার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। তার গোড়ামী ও স্বেচ্ছাচারীতার কারণে শিক্ষার মান ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তাই বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলও খারাপ হয়েছে। প্রইমারী স্তর ও মাধ্যমিক স্তরে ২০০ জনের অধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া’র পিতা হাফিজ জানান, ৪র্থ শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়ে ৩ বিষয়ে ফেল করে ৫ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে আমার মেয়ে। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমান আমাকে বিদ্যালয়ে তার অফিস কক্ষে ডেকে খুবই আচরণসহ আমার মেয়েকেসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিবে বলে এবং টিসি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ধীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদে দ্রæত প্রধান শিক্ষক পদায়ন করে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা সচিব, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা ও উপপরিচালক খুলনা এর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল।