জাতীয় ডেস্ক:
বই পড়ার প্রতি উদাসীনতায় হতাশা প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে গেছে কোনো বই পড়া হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের কোনো রাজনীতিবিদ বই পড়েন বলে তার মনে হয় না।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বাংলা একাডেমিতে বিরূপাক্ষ পালের ‘সহজ কথায় অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, অর্থনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক একদিকে ভালোবাসার, অন্যদিকে ঘৃণার। অর্থনীতি ভালোবাসি বলেই পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এত কঠিন বিষয় বোঝা দুঃসাধ্য। একদিকে পড়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে না বোঝার বেদনা সম্পর্কটা ‘লাভ-হেইট রিলেশনশিপ’ হয়ে গেছে।
নিজের চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মান্নান বলেন, চাকরি জীবনে সরকার আমাকে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’ পড়তে পাঠিয়েছিল। কী পড়ব। জটিল আঁকিবুকি দেখে আমি কিছুই পড়তে পারি নাই। মূলত অ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতি বা মার্ক্সের অর্থনীতিতে সাহিত্যের ছোঁয়া ছিল। আমেরিকান স্কুলগুলোর ছোঁয়াতে অর্থনীতি এত জটিল হয়েছে। মূলত শিকাগো স্কুলের হাত ধরে এমন হয়েছে। যদিও ভালো ২০০ পাতা লেখার বদলে দুই একটি আঁকিবুকি দিয়ে অর্থনীতি বোঝা যায় এখন।
নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই বলে আমাকে যেই আমন্ত্রণ জানায় আমি সেখানেই যাই। আসলে রাজনীতির জীবন একেবারে শেষ পর্যায়ে। বিক্রেতা বাজারে শেষ পণ্য যেমনি সস্তায় দিয়ে দেয়, আমার অবস্থা এখন এমন।’
দেশের অর্থনীতি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ নারীদের কার্যক্রমকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছেন। যদিও বিশ্বের কোথাও এটি করা হয় বলে আমার জানা নেই। তবে আমরা করছি। একটি খসড়াও হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর পর এটি প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘নারীরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আরও চান, স্পিকার হওয়ার পর আরও চান, বিরোধী দলীয় নেত্রী হবার পরেও আরও চান। এবার তাদের সব চাওয়া পূরণ করে অর্থনীতিতে তাদের অবদান যোগ হচ্ছে। জিডিপিতে এটির হার বেশ ভালো অনুপাতে যুক্ত হবে।’
বইয়ের লেখক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, অর্থনীতির সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতিকে মানুষের রক্তচাপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। রক্তচাপ বেড়ে গেলে যেমন অসুবিধা, কমে গেলেও অসুবিধা। এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দেশীয় অর্থনীতির মাথা হচ্ছে দেশের সরকার। সরকার ভালোও হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে। একটি ভালো সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য সে দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোকে সামাল দেয়ার সক্ষমতা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ফারুক।