হোম জাতীয় প্রথম মাসে পদ্মা সেতুর টোল আদায় ৭৬ কোটি ছাড়াল

জাতীয় ডেস্ক :

পদ্মা সেতুতে প্রথম ৩০ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৫০ টাকা। স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক মাস পূর্ণ হয় সোমবার। আর যান চলাচল উন্মুক্তকরণের মাসপূর্তি হয় আজ মঙ্গলবার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরদিন ২৬ জুন থেকে সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২৬ জুন থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত এই প্রথম এক মাসে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৫টি। পদ্মা সেতু থেকে প্রতিদিন গড় টোল আদায়ের হার আড়াই কোটি টাকারও বেশি। সেতু চালুর পর থেকেই নির্বিঘ্নে দিনরাত অবিরাম যানবাহন পারাপার হওয়ায় দিন বদলের হাওয়া বাইছে চারদিক।

যান চলাচলের প্রথম দিন ২৬ জুন পদ্মা সেতু দিয়ে ১৮ ঘণ্টায় মোটার সাইকেলসহ রেকর্ড পরিমাণ ৫১ হাজার ৩১৬টি যান পারাপার হয়। যা থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২৬ হাজার ৫৮৯টি যানবাহনের টোল উত্তোলন হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৮৭ হাজার ১৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে ২৪ হাজার ৭২৭টি যানবাহনের বিপরীতে টোল উত্তোলন হয়েছে ১ কোটি ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা।

৮ জুলাই পদ্মা সেতু দিয়ে ৩১ হাজার ৭২৩টি যান পারাপারে আয় হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ সর্বোচ্চ ৪ কোটি ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫০ টাকা। মাওয়া প্রান্তে ১৯ হাজার ৬৬৭টি যানবাহনের বিপরীতে টোল আদায় হয় ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ২৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে ১২ হাজার ৫৬টি যানবাহনের বিপরীতে টোল আদায় করা হয় ১ কোটি ৭১ লাখ ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রথম এক মাসে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত হয়ে পাড়ি দিয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৫ যানবাহন। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসে সেতুতে টোল আদায় ৭৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথম এক মাসে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সেতু পাড়ি দিয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ১১৮ যানবাহন। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩৮ কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

অন্যদিকে জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পাড়ি দিয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৩৭ যানবাহন। এতে আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা।

মাওয়া টোলপ্লাজা ব্যবস্থাপক হাসিফ হোসেন জানান, ঈদের সময় চাপ ছিল, তবে সে চাপ আমরা সফলভাবে সামলাতে পেরেছি। এখন যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন টোল আদায়ে আরও আধুনিক সিস্টেম ইন্সটলেশন করবে ডিসেম্বরের মধ্যে। তখন সক্ষমতা আরও বাড়বে ও দ্রুত টোল আদায় হবে। এখন ঘণ্টায় সহস্রাধিক যান পারাপার হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন ক্যাশ ট্রানজেকশনে টোল আদায় হচ্ছে, পাশাপাশি একটি হাইব্রিড লেনে ক্যাশ ও ইলেকট্রনিক ট্রানজেকশনের লেন রয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে টোল প্লাজায় একটি ইটিসি লেনও থাকবে। এছাড়া ইমার্জেন্সি লেনও রয়েছে।

বর্তমানে ২০ টি কোম্পানির বাস নতুনভাবে চালু হয়েছে শুধু সেতুকে ঘিরে। আর আগের কোম্পানিগুলোও বাস বৃদ্ধি ছাড়াও অন্যান্য রুটের বাস এই পথে নিয়ে আসছে। ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়বে। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস।

তিনি বলে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে চলন্ত যানে টোল আদায় করা হয় সেভাবেই আদায় করা হবে।

এদিকে সেতুতে এখনও ওজন স্টেশন চালু করা হয়নি। তবে এটিও আগামী ৬ মাসের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

ওজন স্টেশন চালু হলে টোলের হার আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এখন পণ্যবাহী যানগুলোর চালান বা মুখের কথার বিশ্বাসে টোল নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত পণ্যবহন করা যানগুলো তাই অনায়াসেই পার হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে পদ্মা সেতু চালুর এক মাসেই নানা রকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেতুর কাছাকাছি জেলার অনেকে বাড়ি থেকেই সরাসরি ঢাকায় অফিস করতে পারছেন। সেতু ঘিরে প্রথম মাসেই বদলে গেছে অনেক কিছু। দক্ষিণের ২১ জেলা রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়ার পর ফেরির বিড়ম্বনা আর নেই। যেখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে পদ্মা পাড়ি দেয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণতে হতো। আর সেখানে চোখের পলকে বিশাল পদ্মা পার হওয়া যেন দিবা স্বপ্ন। তাই কৃষি, শিল্প, পর্যটনসহ সব সেক্টরে আমূল পরিবর্তন সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ স্বত্বেও এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত সহজ হওয়ায় কৃষকের উৎসাহ বেড়ে গেছে। আবাদে কোমর বেঁধে নেমেছে।

কৃষিবিদ খুরশিদ আলম জানিয়েছেন, হাল অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কৃষিতে আবাদ বাড়বে। কৃষিক্ষেত্রে বড় রকমের সাফল্য তাই এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর পর্যটকদের এখন প্রধান পছন্দের পদ্মা সেতু। দুই প্রান্তেই তাই পর্যটন শিল্প বিকশিত হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগে আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনীতির গতি আসতে শুরু করেছে। সেতু ঘিরে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া ছাড়াও দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্পের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।

পদ্মা সেতুর কারণেই দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড় যে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা সেতুটির ব্যয়ের প্রায় তিনগুণ বেশি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন