মোস্তফা কামাল, নড়াইল:
নড়াইলে ভরা মৌসুমে পাটের দাম না থাকায় লোকশান গুনছেন পাট চাষিরা। এ বছরে পাটের ভালো ফলন হওয়ায় লাভের আশায় বুক বাঁধলেও দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন এ জেলার চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে , এ বছর জেলায় মোট ২৩ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে; যার বিপরীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ১৪০ বেলপাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। তাইতো নতুন পাটে সয়লাব এখানকার হাটবাজার। জেলার সবচেয়ে বড় পাটের মোকাম মাইজপাড়া,মিঠাপুর,রুপগ ,তুলারামপুর,লোহাগড়াসহ বিভিন্ন হাটে নানা প্রয়োজনে বিক্রির জন্য চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসছেন। হাটগুলোতে বেলা বাড়তে না বাড়তেই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগমে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে দর নিয়ে হতাশায় পড়েন চাষিরা।
মাইজপাড়ার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পাট প্রতি মণ ১হাজার ৫শত থেকে শুরু করে ১হাজার ৯শত টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে, তবে মানভেদে কিছু পাট ১হাজার ৩ টাকা এবং সামান্য কিছু সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তবে এ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, চড়া দামে ডিজেল সার শ্রম কিনে ফসল ফলাতে গিয়ে এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। এ দিকে নতুন পাট ঘরে উঠতে না উঠতেই বাজার পড়ে যাওয়ায় লাভ দূরে থাক খরচও ওঠা নিয়ে তারা শঙ্কা আছি। ধারদেনা শোধ করা নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। এ অবস্থায় তারা বর্তমান উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজার দর নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে মাইজপড়ার পাট ব্যাপারী শাহাজাহান ও গোবিন্দ কুন্ডু জানান, পাটকল বর্তমানে দর কমিয়ে দিয়েছে, তাছাড়া পাট বিক্রি করে তাদের অনেক টাকা বাকি পড়েছে। তাই পাটকল পাট নেয়াও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পাট বাজার পড়ে গেছে। এছাড়া সময়মত বৃষ্টির পানি না হওয়ায় অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় অন্যবারের তুলনায় গুনগত মান নষ্ট হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, নড়াইলে প্রধানত ভারতীয় জে আর ও ৫২৮ জাতের পাটের আবাদ হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বি জে আর আই তোসা পাট ৮ জাতের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি যথাযথ পরিচর্যা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতায় এবার পাটের ভালো ফলনও হয়েছে। ফসলের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আধুনিক নানা চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পাট চাষ সম্প্রসারণে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজার দর নিশ্চিত জরুরি বলেও তিনি অভিমত দেন।
উলেখ্য গত রোববার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কৃষক সমিতির আয়োজনে পাটের মুল্য বৃদ্ধির দাবীতে নড়াইলের আদালত সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।