আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সম্প্রতি ইসরাইলে অতর্কিত হামলায় হাজারের ওপরে ইসরাইলি নাগরিক নিহতের ঘটনায় নতুন করে আবার আলোচনায় এসেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নাম। প্রশ্ন উঠেছে, নিজেদের বাহিনী পরিচালনা ও অস্ত্রের অর্থ জোগানে কোথা থেকে পাচ্ছে হামাস।
সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে হামাসের সামরিক বাজেট ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। মূলত আন্তর্জাতিক নানা দাতাসংস্থার বাদন্যতাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হামাসের বড় বাজেটের বাহিনী।
হামাসের মূলত দুটি শাখা- সামরিক এবং সামাজিক। মূল শাখাটি সামাজিক কার্যক্রমের নামে নানা দাতাসংস্থা থেকে টাকা তোলে। মূলত গাজায় নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য তোলা অর্থের একটি বড় অংশ হামাস নিজেদের সামরিক কাজে ব্যয় করে বলে দাবি পশ্চিমাদের।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর আসাল বলেন, হামাস দাতাসংস্থাগুলোকে মানবতার বাণী শুনিয়ে সামরিক অভিযানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। অনেকেই মনে করেন হামাসকে অর্থায়ন শুধু মুসলিম বিশ্বই করে থাকে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। হামাসের বড় একটি অর্থের জোগান আসে পশ্চিমা বিশ্বের দাতাসংস্থাগুলো থেকে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের অনেক সংগঠন হামাসকে অর্থায়ন করে। ২০০৯ সালে আরেক অনুসন্ধানে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলি ল্যান্ড ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে হামাসকে অর্থায়ন করে আসছে, যা সংগঠনটির সামরিক কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়।
পশ্চিমা বিশ্ব ছাড়া হামাসের অর্থায়নের আরেকটি বড় উৎস ইরানের অনুদান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা ম্যাথিউ লেভিট বলেন, প্রতিবছর হামাস ইরান থেকে ৭০-১০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য পায়। প্রাপ্ত এই অর্থের পুরোটাই নিজেদের সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় করে সংগঠনটি।
লেভিট বলেন, ইরান ইসরাইলকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করলেও নিজেদের কখনো সম্মুখে আনে না। সম্মুখযুদ্ধে আরবের মুসলিমদের ঠেলে দিয়ে পেছন থেকে অস্ত্রের যোগান দেয় দেশটি। লেবানন বা গাজা সীমান্ত মুসলিমদের পক্ষ থেকে যত যুদ্ধ হয়, তার সিংহভাগ ব্যয় বহন করে ইরান।
নিজেরা যুদ্ধ করলে সামরিক বাহিনীতে যে পরিমাণ অর্থলগ্নি করতে হবে, তার চেয়ে হামাসকে অর্থায়ন করা ইরানের জন্য বেশি লাভজনক বলে মন্তব্য করেন লেভিট।
এফবিআইয়ের তথ্য মতে, গাজায় হামাস অধ্যুষিত অঞ্চলে কর আদায় থেকে শুরু করে নানা ধরনের বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হামাস। বিশেষ করে গাজা হয়ে যেসব মাদক মিশরে প্রবেশ করে তার ওপরে হামাসের ধার্য করা নির্দিষ্ট কর রয়েছে। এছাড়া ইসরাইল থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে তাদেরকেও পড়তে হয় হামসের অঘোষিত করের আওতায়। এ সংক্রান্ত কর আদায় করে বছরে হামাস ৩০০-৪৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করে।
লেভিট জানান, অর্থ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা হামাসের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। হামাস কখনো সরাসরি টাকা লেনদেন করে না। টাকার বদলে পণ্য নিয়ে সেটিকে আবার বাজারজাত করে অর্থের ব্যবস্থা করে সংগঠনটি।
ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেমনি ইসরাইলকে যুদ্ধের জন্য টাকা দিচ্ছে, তেমনি ফিলিস্তিনে পাঠাচ্ছে ত্রাণ। সম্প্রতি ফিলিস্তিনে বাইডেন প্রশাসন ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি কর্মকর্তা অ্যালেক্স জার্দেন বলেন, ত্রাণ হিসেবে পানি, খাবার ও ওষুধ দিচ্ছে আমেরিকা। কিন্তু যেকোনো পণ্যকে চাইলে অর্থে রূপ দেয়া সম্ভব। গাজার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা যেহেতু হামাসের আওতাধীন, সেক্ষেত্রে ত্রাণের বড় একটি অংশ সংগঠনটির সামরিক খাতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে মধ্যপ্র্যাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস গঠনের মূল হোতা ইসরাইল নিজে যেখানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মদদ ছিল। এখন নিজেদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে ওঠায় একে ওকে দোষ চাপিয়ে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছে ইসরাইল এবং আমেরিকা।