অনলাইন ডেস্ক:
পশু চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে নড়াইলের বিভিন্ন পল্লিতে পশুদের চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রজনন কর্মীদের বিরুদ্ধে। চিকিৎসা দেয়ার অনুমোদন না থাকলেও অনেক খামারি ও প্রান্তিক কৃষক না বুঝেই তাদের দিয়ে পশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। ফলে অনেক পশু মারা যাচ্ছে। প্রজননের ক্ষেত্রেও বাড়তি টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। নড়াইল সদরে এ রকম অভিযোগ উঠেছে অনুপম বকশী নামে এক প্রজনন কর্মীর বিরুদ্ধে।
সদর উপজেলার বাহির গ্রামের বিচিত্র কুণ্ডু ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘এলাকার অনুপম বকশী নামে একজন কথিত পশু চিকিসকের কাছ থেকে আমার গাভিকে সাত থেকে আটবার প্রজনন করিয়েও কোনো ফল হয়নি। অথচ প্রতিবার তিনি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।’
নিরালী গ্রামের কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘আমার গাভি অসুস্থ হলে অনুপম বকশীকে খবর দিই। তিনি ইনজেকশন দিলে গাভির পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। পরে গাভিটি মারা যায়।’
একই গ্রামের মেঘনাথ রায় বলেন, ‘আমার একটি এঁড়ে গরুকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনুপম বকশী মেরে ফেলেন। কোড় গ্রামের ঝড়ো বিশ্বাসের গরুও তার চিকিৎসায় মারা গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুপম বকশীর বাড়ি সদর উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের দেবভোগ গ্রামে। তিনি আমেরিকা ডেইরি লিমিটেডের (এডিএল) একজন প্রজনন কর্মী। তার কোনো পশু চিকিৎসাসেবার সনদপত্র নেই। অথচ তিনি পশুর সব ধরনের চিকিৎসা দিয়ে বেড়ান।
বাড়িতে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে অনুপম বকশী বলেন, ‘পশু প্রজনন থেকে শুরু করে পশুদের সব ধরনের চিকিৎসা দেয়ার প্রশিক্ষণ আমার নেয়া আছে।’ প্রজননে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘আপনারা যা পারেন লেখেন।’
গ্রামের খামারিসহ কৃষকরা জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনুপম বকশীর মতো আরও কিছু পশু প্রজনন কর্মী পাড়া-মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে বেড়ান। তাদের কাজ মূলত প্রজননে সহায়তা করা। কিন্তু তারা নিজেদের পশু চিকিৎসক পরিচয় দেন, কোনো পশুকে অসুস্থ দেখলে খামারি বা কৃষককে কৌশলে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করেন। এই সুযোগে তারা মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেন। অন্যদিকে পশুর সাধারণ অসুস্থতায় তাদের চিকিৎসা কোনো ক্ষতির কারণ না হলেও গুরুতর অসুস্থ পশুগুলো অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
নড়াইল সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলায় পৌরসভাসহ ইউনিয়ন রয়েছে ১৪টি। সরকারিভাবে এ উপজেলায় পশু চিকিৎসক রয়েছেন তিনজন। আর উপজেলায় গাভির খামার রয়েছে ৩৪০টি, গরু মোটাতাজাকরণ খামার ৫৬০টি, মুরগির খামার সাতটি, ব্রয়লার খামার ১২১টি, ছাগলের খামার ৩৫০টি ও হাঁসের খামার রয়েছে ৪০টি। সরকারিভাবে নিযুক্ত এই তিন পশু চিকিৎসক এবং ১২ জন এআই টেকনিশিয়ানকে এসব খামারের ৩২ হাজার ১৪০টি পশুর দেখভাল করতে হয়। চাহিদার তুলনায় জনবলের সংকট কাজে লাগিয়েই প্রজনন কর্মীরাও নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খামারি ও কৃষকরা জানান, গাভি প্রজননের ক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে নড়াইলে ব্র্যাক, হিজাব, এডিএল, এসিআই ও লাল তীর প্রজনন বীজ স্থানীয়ভাবে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকেন। এ ছাড়া চোরাইপথে আসা ভারতীয় গীর ও ব্রাহান জাতের বীজের ব্যবহারও রয়েছে। তবে এসব বীজ বিক্রি করা হয় বাড়তি দামে। এ ক্ষেত্রেও উন্নত জাতের পশু প্রজননের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের জনবল কম থাকায় শুনেছি একশ্রেণির প্রজনন কর্মী নিজেদের পশু চিকিৎসক দাবি করে বিভিন্ন গ্রামে পশুদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসকদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে তালিকা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে।