রাজনীতি ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রোববার ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
সারা দেশে সংসদীয় আসনে নতুন মুখ যেমন এসেছেন, তেমনি বাদও পড়েছেন পুরোনো বিতর্কিত ও বয়সের ভারে ন্যুব্জরা। তবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অনেক হাইপ্রোফাইল নেতা রয়েছেন, যাদের আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।
তাদের একজন হলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এবারও নোয়াখালী-৫ আসনে নৌকার কাণ্ডারি তিনি।
নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সপ্তম, নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
জন্ম : ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম মোশাররফ হোসেন এবং মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদেরের ভাইবোনের সংখ্যা ৯।
পড়াশোনা : বসুরহাট সরকারি এএইচসি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় স্থান পান তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্র রাজনীতি : নোয়াখালী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার সময় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ছাত্রনেতা হিসেবে ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। ওবায়দুল কাদের একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন; ছিলেন মুজিব বাহিনীর কোম্পানীগঞ্জ থানার কমান্ডার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংস হত্যার পর ওবায়দুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আড়াই বছর তিনি কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরপর দুবার এ পদে ছিলেন তিনি। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
রাজনৈতিক জীবন : ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন নিষ্ঠার সঙ্গে। ওই বছরই নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি দ্বিতীয়বারের মতো দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সংসদ সদস্য : ১৯৯১ সালে প্রথমবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান ওবায়দুল কাদের। পরে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
মন্ত্রিত্ব : ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর দায়িত্ব পান যোগাযোগমন্ত্রীর। ২০১৪-২০১৮ সালেও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালে মোট চারবার। এই চারবারই ওবায়দুল কাদের মন্ত্রিসভায় স্থান পান। তবে ২০০৮ সালে গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রথম দিকে জায়গা পাননি তিনি। সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি এসে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের দিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভেঙে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এ সময় তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।