রাজনীতি ডেস্ক:
নেত্রকোনার ৫টি আসনের মধ্যে ৪টিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে লড়বেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলীয় কোন্দলসহ গ্রুপিং এবং আধিপত্য বিস্তারে বাকি ৪ টি আসনের হিসাব হবে সমানে সমান। যে কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার ৫ টি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। ফলে ভোটের হিসাবে দেখা যাচ্ছে জটিল সমীকরণ। যার যার যোগ্যতা তুলে ধরে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। দলীয় তৃণমূলে চলছে জনমত বিশ্লেষণ। তার মধ্যে নেত্রকোনা ৪ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ আসটিতে নৌকার প্রার্থী ফুরফুরে।
অন্যদিকে সংসদীয় আসন ১৫৭ নেত্রকোনা-১, ১৫৮ নেত্রকোনা-২, ১৫৯ নেত্রকোনা-৩ এবং ১৬১ নেত্রকোনা-৫ আসনে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এ চারটিতেই জয় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নৌকার প্রার্থীদের। দলটির কোন্দল গ্রুপিং বেশ বড় আকারের থাকলেও তা এখন আর প্রকাশ্যে নেই। যদিও দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন নৌকার পক্ষে। কিন্তু রাজনীতির সমীকরণ মেলালে দেখা যায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোটের মাঠ দখলে এগিয়ে।
এদিকে নৌকার প্রার্থীদের মনোবল চাঙ্গা থাকলেও হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। নির্বাচনটি তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নেত্রকোনা ৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক দুজন এমপি। বর্তমান সরকারের সাংসদ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৯ম জাতীয় সংসদের সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মঞ্জুর কাদের কোরাইশী ও দশম জাতীয় সংসদের সাংসদ ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। তারা দুজনই এবারেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আরও একজন কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন।
গত তিন ডিসেম্বর যাচাই বাছাই কমিটির সভায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। এদিকে নেত্রকোনা-২ (সদর- বারহাট্টা) আসনে নৌকার প্রার্থী সমজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনেও নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহির সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সাবেক এমপি জালাল তালুকদারের মেয়ে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগপ্রাপ্ত জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার। তিনি শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে লড়ছেন।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে উপনির্বাচনে এমপি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শক্তিশালী নেতা শফি আহমেদ থাকলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় জাতীয় পার্টি ছাড়া সেই আসন নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।
এদিকে নেত্রকোনা-৫ ( পুর্বধলা) আসনের নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন মাঠে নামলেও প্রথমে চারজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে স্বতন্ত্র সকলের মনোনয়ন বাতিল হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন আপিল করে প্রার্থিতা ফিরিয়ে আনেন। তিনি কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই এবং তিন বারের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীর প্রতীক) বড় ভাই। যে কারণে কর্নেল তাহের পরিবারের পক্ষে একজন থাকায় এলাকায় নৌকার প্রার্থীর জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসনটি।
সব কিছু ছাপিয়ে নৌকা বিজয় অর্জন করবে এমন বিশ্বাস রেখে দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান (ভিপি লিটন) বলেন, শেখ হাসিনার ছায়া হচ্ছে নৌকা। আর নৌকার বাইরে কারোর যাওয়ার সুযোগ নেই। জেলার ৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ৫ জনসহ মোট প্রার্থী রয়েছেন ২৪ জন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রয়েছেন ৫ জন। জাতীয় পার্টির ৫ জন। অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী বাকি ৯ জন।