হোম ফিচার নিষিদ্ধ শাপলা পাতা মাছে সয়লাব মোংলার বাজার, নিরব প্রশাসন !

সোহাগ মোল্লা, মোংলা :

কেজি ৪০০, কেজি ৪০০ তাজা মাছ ৪০০ খাইলে আবার আসবেন ৪০০! এভাবেই প্রকাশ্যে মোংলার প্রধান মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন প্রজাতির ‘ শাপলা পাতা মাছ ‘।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে এই মাছ বিক্রি হচ্ছে। তবে সাগর এবং সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ নদীতে বিলুপ্ত প্রজাতির এই মাছ শিকার নিষিদ্ধ ও বিক্রি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও কেউ তা মানছেননা। স্থানীয় প্রশাসন এমনকি মৎস্য বিভাগ এবং বনবিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা নিরব থাকায় অহরহ এই মাছ বাজারে আসছে।

শাপলা পাতা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ ষ্টিংরে ফিস’। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আই ইউ সি এন) কর্তৃক শাপলা পাতা মাছকে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ সালের আইনানুযায়ী এই মাছ শিকার নিষিদ্ধ।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকালে মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন বিক্রেতা ডালায় শাপলা পাতা মাছ সাজিয়ে হাকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন। কেজি ৪০০, কেজি ৪০০, তাজা মাছ ৪০০ খাইলে আবার আসবেন ৪০০। এরকম চটকারি হাক দেওয়ার ঘোষণায় ক্রেতারাও হুমরি খেয়ে কিনছেন। তবে এই মাছ শিকার এবং বিক্রিযে নিষিদ্ধ তা জানেননা বলে দাবি বিক্রেতাদের।

মোংলা পোর্ট পৌরসভা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোঃ আফজাল ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সাগর থেকে জেলেরা শাপলা পাতা মাছ বাজারে আনছেন। এই মাছ ধরা বা বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা আমরা জানিনা, আমাদের কেউ বলেনি। সাগর থেকে এই মাছ শিকার করে নদী পথে আনার সময়ও বনবিভাগের কোন কর্মকর্তাও বাধা দেয়না।

মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ সোলায়মানের দাবি, বনবিভাগের লোকজনই তাদের শাপলা পাতা মাছ বাজারে আনার সহায়তা করেন। তারা নিষেধ করলেতো আর এই মাছ বাজারে ওঠানো সম্ভব না। অন্য এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিএম (বোটম্যান) মোঃ মিজানুর রহমান এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করতে তাদের কাছ থেকে কয়েকদফা টাকা নিয়েছেন।

তবে বিএম মিজানুরের দাবি, ব্যবসায়ীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জানতে চাইলে এপ্রসঙ্গে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, প্রচার প্রচারণার অভাবেই মূলত কেউ জানেনা এই শাপলা পাতা মাছ শিকার নিষিদ্ধ। এখন থেকে মাইকিং করে এটার বিরুদ্ধে সতর্ক করবো আমরা। আর বিএম মিজানুর রহমানের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, সাগর বা সমুদ্র থেকে দিনের পর দিন এভাবে নিধন চলতে থাকলে একসময় এই শাপলা পাতা মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বনবিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের উদাসীনতার কারণেই এমন শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিকার হওয়ায় জীব বৈচিত্র্যর বাধাগ্রস্থ হবে। সাগরে এই মাছের নিধন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন