হোম রাজনীতি নির্বাচনী মেজাজে দেশ, কেউ বাধা দিতে পারবে না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

রাজনীতি ডেস্ক:

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তপশিল ঘোষণার পর দেশ ও দেশের জনগণ এখন নির্বাচনী মেজাজে আছে। কেউ নির্বাচনে বাধা দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আশা করে, নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু কেউ যদি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তাদের জন্য অপেক্ষা করা হবে না।

ইনিশিয়েটিভ ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশের (আইডিডিবি) উদ্যোগে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন : দক্ষিণ এশিয়ান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, নয়াদিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী, এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডেন্ট ও একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক এম শফিকুল করিম, ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাউয়ের কনসাল্টিং এডিটর সৃঞ্জয় চৌধুরী, দৈনিক জাগরণের বিশেষ প্রতিনিধি জয়প্রকাশ রঞ্জন, আইনবিদ ও রাজনীতিক প্রশান্ত বি বড়ুয়া, রাশেক রহমানসহ আরও অনেকে।

গণতান্ত্রিক যাত্রায় আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন বর্জন করেনি উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, যারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার অংশ হবে না। অতীতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ভুলে দেশ-বিদেশে, এমনকি তাদের বিদেশি প্রভুরাও সমালোচনা করেছে।

বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঔপনিবেশ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি মন্তব্য করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখনো অনেকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ চায়। বিদেশি উপদেশ ছাড়া চলতে না পারার মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদেশিরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলবেন না আশা প্রকাশ করে শাহরিয়ার বলেন, যারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা বলে, তারা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি ধনী ও উন্নত হওয়া সত্ত্বেও তাদের নির্বাচনেও অনেক সমস্যা থাকে। অথচ ভারত সবচেয়ে বড় ও সফল গণতান্ত্রিক দেশ এবং তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াও সফল।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গণতন্ত্র একটি দীর্ঘ যাত্রা এবং এই যাত্রায় সহযাত্রীদের মধ্যে মিল না থাকলে বেশিদূর যাওয়া যায় না। প্রতিটি দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র কেমন প্রভাব ফেলবে– তার ওপর দক্ষিণ এশিয়া গড়ে উঠছে। গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা, এই দেশগুলোর শত্রু যারা, তারা কিন্তু সক্রিয়। তাদের মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে তা এ দেশের জনগণ ঠিক করবে মন্তব্য করে গৌতম লাহিড়ী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, এক্ষেত্রে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে ভারতের স্পষ্ট অবস্থানের কথা তুলে ধরে অভিজ্ঞ এই সাংবাদিক আরও বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের সব মতের সঙ্গে ভারত একমত নয়। প্রতিবেশী বন্ধুদেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল ও অরাজকতা সৃষ্টি হোক তা চায় না, বিশেষ করে যা দু’দেশের সোনালি অধ্যায়ে উন্নীত হওয়া সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।

তিনি তার দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে। আর যে দল সরকারে থাকে, তারা নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে সহযোগিতা করে। এই ব্যবস্থা নিয়ে ভারতে কোনো মতভেদ বা অসন্তোষ নেই। ভারতের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা অসন্তুষ্ট হন, কিন্তু কেউ নির্বাচন অস্বীকার করে না। সেখানে এমন কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই, যিনি নির্বাচনে পরাজিত হননি। তবুও সেখানে অসন্তোষের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে মেনে নেওয়ার রীতি রয়েছে।

বৈরী পরিস্থিতিতেও আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করেনি উল্লেখ করে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এ দেশের গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এবারও সংবিধান মেনে জনগণের সম্পৃ্ক্ততায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। যারা এই নির্বাচনে আসবে না, তারা নিজেরাই নিজেদের রাজনীতির কবর রচনা করছেন।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বাংলাদেশ জন্ম থেকেই দু’ভাগে বিভক্ত। এই বিভাজন রাজনীতি, নির্বাচনসহ সর্বত্র সংকট তৈরি করছে। বিভাজনের সুযোগ নিয়ে ভূ-রাজনীতির নামে অন্য কোনো দেশ এ অঞ্চলের কোনো দেশের গণতন্ত্র ব্যাহত করতে চাইছে।

সৃঞ্জয় চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কেমন হবে তা ঠিক করবে এ দেশের জনগণ। এ নিয়ে অন্য দেশের কথা বলার অধিকার নেই।

আসন্ন নির্বাচন সবার জন্য চ্যালেঞ্জ- এমন মন্তব্য করে শ্যামল দত্ত বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আনা। আর সহিংস কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতি টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টাও বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন