অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের দোতালার একটি দোকানে কাজ করে ১০ বছর বয়সি মুহম্মদ রাব্বী। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে আসে মালিকের দোকান রক্ষা করতে।
আগুনের মধ্যে ভবনের ছাদে নিজের দু’হাত দিয়ে আগুন নেভানোর পানির পাইপের লিকেজ বন্ধ করতে চেপে ধরে বসে আছে রাব্বি। এখনে কী করছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমি থাকি কামরাঙ্গীরচরে। মালিকের দোকানে আগুন লেগেছে শুনে চলে এসেছি। বালতি-মগ দিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করেছি। শরীর আর চলছে না।’
বাসায় চলে যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে রাব্বি বলে, ‘আগুনতো পুরোপুরি নেভেনি এখনো। আগুন নেভাতে না পারলেও পাইপের লিকেজ বন্ধ করে বসে আছি। আগুন নেভার পর বাসায় যাব।’
বঙ্গবাজারের পর স্বপ্নভঙ্গের তালিকায় এবার নতুন নাম যুক্ত হলো রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট। শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোরের আলো না ফুটতেই আগুনের লেলিহান শিখার দখলে নিউ মার্কেট। ভয়াবহ আগুনের তীব্রতার কাছে নস্যি যেন সবকিছু। দানবীয় আগুনে একে একে পুড়তে থাকে ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাকে সজ্জিত দোকান। সেইসঙ্গে পুড়ে যায় দোকানিদের স্বপ্ন।
ঈদের বাকি হাতে গুণে আর মাত্র সপ্তাহ খানেক। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভালো বিক্রির আশায় যখন সেহরি খেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুমে ব্যবসায়ীরা, ঠিক তখনই ঘুমন্ত নগরীতে আবারও আগুনের হানা।
খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শুরু করেন আগুন নেভানোর কাজ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগুন রূপ নেয় দানবীয় আকারে। অসহায় হয়ে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। যুক্ত হয় আরও নিউনিট। এক পর্যায়ে ৩০টি ইউনিট হাত লাগায় অগ্নিনির্বাপণের কাজে। আগুন নেভাতে পার্শ্ববর্তী ঢাকা কলেজের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিস।
আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসা দোকানিরা নিজেদের মতো হাত লাগান আগুন নেভানোর কাজে। কিন্তু আগুনের তীব্রতার কাছে ব্যর্থ যেন সব প্রচেষ্টা। সব তৎপরতা।
ভয়াবহ আগুন নেভাতে শুধু ফায়ার সার্ভিসই নয়, যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও।
ফায়ার সার্ভিসের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় একপর্যায়ে কিছুটা হার মানে আগুন। তবে ততক্ষণে পুড়ে ছাই অনেক কিছু। উৎসুক জনতার ভিড় সামলে আগুন নেভাতে কিছুটা ধকল পোহাতে হয়েছে জানিয়ে খোদ ফায়ার সার্ভিসের ডিজির প্রশ্ন, কেন একের পর এক এমন অগ্নিকাণ্ড?