জাতীয় ডেস্ক:
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুর সহযোগী নয়নকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (৩ জুলাই) গভীর রাতে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বাত্তী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নয়ন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের মধ্য ধাতুয়াকান্দা গ্রামের সানোয়ারের ছেলে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ভোর থেকে নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সাংবাদিক নাদিম হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নয়ন। তিনি প্রধান আসামি বাবুর সহযোগী বলেও জানিয়েছেন। তবে নয়ন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নয়।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, সোমবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে নয়নকে আটক করা হয়েছে। ভোর থেকেই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নয়নকে আদালতে তোলা হবে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি এবং বরখাস্ত হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলেসহ ১৭ আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর এজাহারভুক্ত কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি।
এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ২ নম্বর আসামি বাবুর ছেলে রিফাতসহ শামীম খন্দকার, স্বপন, আমীর আলী এবং রাকীবিল্লাহ্ এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাতে কারও চোখেই ঘুম নেই।
গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত (১৮) বলেন, মামলার প্রধান আসামি বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত এবং শামীম খন্দকার বকশীগঞ্জের ত্রাস। তাদের হাতে কেউ নিরাপদ না। আমার বাবাকে আগেরবার হামলায় শামীম খন্দকার ছিল। আর বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাতের বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তারা গ্রেফতার না হওয়ায় আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি। সারারাত জেগে থাকি, মা ঘুমালে আমি জেগে থাকি, আর আমি ঘুমিয়ে পড়লে মা জেগে থাকেন। মনে হয় কখন জানি রিফাত এসে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাতে কেউ এলে দরজা খুলছিল না। আমরা ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি কেন আসামিদের ধরছে না। তারা বলে, চেষ্টা করছেন। এই সান্ত্বনা নিয়ে আছি।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের’ জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন জামালপুরের বকশীঞ্জের সাংবাদিক রব্বানি। পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুর নেতৃত্বে তার ওপর হামলা করে একদল সস্ত্রাসী। এ সময় তাকে টেনেহিঁচড়ে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও বেদম মারধর করা হয়। হামলার সময় মাহমুদুলের ছেলে ফাহিম ফয়সাল রব্বানির মাথায় আঘাত করেছিল বলে জানিয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শী। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর মামলার আগে র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে যে ১৩ জনকে আটক করেছে, তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে রিমান্ড শেষে সব আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এই মামলার প্রধান আসামি উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমসহ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন আসামি। ১৭ জুন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মনিরা বেগম বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে আসামি হিসেবে মাহমুদুল আলম, তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল ওরফে রিফাতসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ২০ থেকে ২৫ জনকে।
১৯ জুন মামলাটি সঠিকভাবে পরিচালনা ও গতিশীলভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে নিতে জামালপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জামালপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরমান আলী বলেন, আমরাও চেষ্টা করে যাচ্ছি আসামিদের ধরতে। কিন্তু আসামিরা ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রব্বানির ওপর হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ প্রথমে ৯ জনকে আটক করে। মামলা হওয়ার আগে ১৭ জুন সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলমসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব। ওই দিন বিকেলে বগুড়া থেকে আরও একজনকে র্যাব আটক করে। সব মিলিয়ে প্রধান আসামিসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের সবাইকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে সব আসামিদের বিরুদ্ধে রিমান্ড চেয়ে পুলিশ ১৭ ও ১৮ জুন আদালতে পাঠায়। ১৮ জুন আদালত মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুকে ৫ দিনের এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠান। ২২ জুন রিমান্ড শেষে আসামিদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে রেজাউল করিম ও মো.মনিরুজ্জামান ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার একদিন পর রিমান্ড শেষে হত্যার দায় স্বীকার করে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।