অনলাইন ডেস্ক :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬১ জনে পৌঁছাল। এদিকে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর পর গতকাল শুক্রবার এক দিনে সর্বোচ্চ ৫১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর আগে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পরিধি বৃদ্ধির পর গতকাল এক দিনে পাঁচজন শনাক্ত হন।
তাদের মধ্যে আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে দু’জন এবং অন্যত্র তিনজন শনাক্ত হয়। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। এতে মৃতের সংখ্যা ছয়জনই রয়েছে। আগে শুধু আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হলেও গতকাল থেকে দেশের আরও ১৪টি প্রতিষ্ঠানে এটা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন করে করোনা সংক্রমণের তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা বাসায় থাকার চেষ্টা করবেন। দূরত্ব মেনে চলবেন। গতকালের ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং এমআইএস শাখার পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান খানও একই মঞ্চে ছিলেন।
এতদিন সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া কোনো কর্মকর্তা মাস্ক ব্যবহার না করলেও গতকাল তাদের সবার মুখে মাস্ক দেখা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মহাপরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত দেশের ৪৩ জেলা থেকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে আইইডিসিআর ১২৬ জনের পরীক্ষা করে দু’জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে। অন্যান্য ল্যাবরেটরিতে ৩৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ মিলেছে।
ডা. আজাদ বলেন, নতুন ল্যাবরেটরিতে তিনজন শনাক্ত হলেও তারা আরেকটু যাচাই-বাছাই করবেন। গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ২৯ জন বর্তমানে পর্যবেক্ষণে আছেন। তাদের মধ্যে ২২ জন হাসপাতালে এবং বাকিরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত সারাদেশে ৬৪ হাজার ৪৮৪ জনকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে এবং ২৪৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৬ হাজার ৩৭৯ জন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৭৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৮২ জন। এখন পর্যন্ত ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাদের ব্যাপারে মহাপরিচালক বলেন, এটির জন্য একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যখন কারও শরীরে করোনাভাইরাস থাকে, তিনি অসুস্থ নাও হতে পারেন। তার শরীরে অনেক সময় মৃদু লক্ষণ থাকে। দু-এক দিনের মধ্যেই হয়তো মৃদু লক্ষণও চলে যায়। কিন্তু পরপর দু’বার পরীক্ষার পর যদি কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস না পাওয়া যায়, তখন ওই ব্যক্তিকে সুস্থ বলা যায়। এ কারণে সময় বেশি লাগে। অন্যথায় আরও আগেই অনেককে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া যেত।
জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. আজাদ বলেন, এই সময় জ্বর, সর্দিসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আবার করোনা আক্রান্ত হলেও সর্দি-কাশি হতে পারে। এ কারণে মানুষ আগের চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। এ অবস্থায় সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে, কারও সামান্য জ্বর-গলাব্যথা হলে বাড়িতেই চিকিৎসা নিন। জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাবেন, গলাব্যথা থাকলে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করবেন। সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ খেতে পারেন। অবস্থা জটিল না হলে হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বেশি অসুবিধা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬২৬৩, ৩৩৩ এবং ১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক খোলা রাখার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারগুলো থেকে রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে গেলে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে বসছেন না। অনেক টেকনিশিয়ান কর্মস্থলে না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও বন্ধ আছে বলে রোগীদের কাছ থেকে প্রায়ই অভিযোগ আসছে। অনেক রোগী কয়েক হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন- এমন ঘটনাও প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে।
রোগী রেখে চিকিৎসকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো এই সময়ে কম কাজ করছে। ক্লিনিক-চেম্বারগুলো অনেকাংশে বন্ধ হয়ে আছে। এই দুর্যোগকালে আপনাদের পিছপা হওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ান, মানুষের সেবা দিন। আমরা কিন্তু এসব লক্ষ্য করছি। পরবর্তীকালে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা তা নিতে পিছপা হবো না।
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা জরুরি উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, পরীক্ষা করলে নিজেও নিরাপদে থাকবেন। আপনার অবস্থা জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে নিজের পাশাপাশি পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। পরীক্ষায় কোনো দোষ নেই। সামাজিক কোনো বাধা নেই। পরীক্ষার মাধ্যমে করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে আমরা আস্তে আস্তে এটিকে নির্মূল করতে পারব।
করোনা শনাক্তকরণে ৭১ হাজার টেস্টিং কিট মজুদ আছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেশি বেশি করে টেস্ট করেন, টেস্ট কিটের কোনো সংকট নেই। পরীক্ষা চালিয়ে যাবেন। পরীক্ষার মাধ্যমেই আমরা জানতে পরি, কত মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সঙ্গে যথেষ্ট পিপিই মজুদ আছে। প্রতিদিনই সব হাসপাতালে পিপিই পৌঁছানোর কাজ চলছে।
সূত্র-সমকাল