হোম অন্যান্যমতামত দেশে আক্রান্তের আশংকা দেড় কোটি মানুষের : চোরাবালির করোনা ভাইরাস

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু :

করোনা ভাইরাস যেনো চোরাবালি। মানুষ বুঝে ওঠার আগেই যেমন চোরাবালিতে পা দিয়ে তলিয়ে যায় ঠিক তেমনি নিরবে করোনা ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে শেষ করে দিচ্ছে জীবন। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব আজ করোনার থাবায় জবুথবু। চারিদিকে ভয়-ভীতি। জনতার কার্ফু, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন বিভিন্ন নাম দিয়ে মানুষদের ঘরে আটকে রাখার চেস্টা চলছে। এমনকি আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও এখন মাঠে ময়দানে কাজ করছেন মানুষজন আটকাতে। কিন্তু সব কিছ্ইু হচ্ছে অনেক দেরিতে।

এখন থেকে ৫০ দিন আগে ইটালীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন। আমলেই নেওয়া হয়নি করোনাকে। যখন হুশ ফিরলো তখন আর কিছুই করার নেই সেদেশের মানুষের, সরকারের। এখন সেখানে মৃত্যুর মিছিল। থামছে-ই না এ মিছিল। নিরব-নিস্তব্ধ ইটালী। চোরাবালির মতো করোনা গ্রাস করেছে ইটালিকে। সেদেশের সরকারের হিসাব মতে এক মাসেরও কম সময়ে আজ পর্যন্ত ইটালিতে করোনায় মারা গেছেন ৬,০০৭ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ হাজার মানুষ।

তবে, ইটালির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সির প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেলি মিডিয়াকে জানিয়েছেন ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার। আর বিশ্বে এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার। সরকারিভাবে বাংলাদেশে ২৫ মার্চ বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ জন। আক্রান্ত ৩৯ জন। আইসোলেশনে ৪০ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৪০ জন রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

তাহলে আমরা বাংলাদেশিরা কোন দিকে হাঁটছি ? অনেক দেরিতে যেমন ইটালি বুঝেছিলো করোনার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আছি। তেমনি আমরাও কি সেই চোরাবালিতে আটকে যাচ্ছি। না-কি এখনো কোনো পথ আছে এই চোরাবালির করোনা মহামারি থেকে বাঁচার।

লাল ড্রাগনের দেশ চীন, ওষুধের দেশ স্পেন, প্রযুক্তির দেশ জাপান, মানবিকতার দেশ ইটালিসহ একের পর এক বিভিন্ন দেশ করোনার থাবায় যখন জবুথবু হয়ে পড়ছে আমরা বাংলাদেশিরা তখনো উদাসীন। মহানবীর জন্মভুমি মক্কা-মদীনাতেও যখন করোনা প্রতিরোধে সেখানকার যুবরাজ কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছেন তখনো আমরা বাংলাদেশিরা ছুটে চলেছি এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। প্রতিবেশি দেশ ভারতের রাম কৃঞ্চ দেবের জন্মভুমিতে যখন করোনা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তখনো আমারা ধীরে চলো নীতিতে রয়েছি।

ভারত যখন বিদেশিদের সেদেশে আসতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো তখনো আমরা বিদেশিদের এদেশে অবাধে প্রবেশ করতে দিয়েছি। ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার আজ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যারা বাইরে আসবে তাদেরকে গুলি করার।

এদিকে, দেরিতে হলেও প্রথমে ফরিদপুরের শিবচরকে লকডাউন ঘোষনা করা এবং বর্তমানে সারা দেশের অভ্যন্তরীন বিমান চলাচল বন্ধ করা, গণপরিবহন, নৌযান বন্ধ করা ও জরুরি পরিসেবা ছাড়া সবধরণের শপিংমল দোকানপাট বন্ধ করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

এমনকি সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে যাতে মানুষ নিজ ঘওে আবদ্ধ থাকেন। কিন্তু এতোসবের পরেও বিশিষ্টজনেরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ইটালী, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এদেশে ফিরেছেন। ফলে আমরা করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েই গেছি।

সাতক্ষীরার কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, জেলায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। ডাক্তাররা করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন উল্লেখ করে তারা আরো জানান, করোনা চিকিৎসায় পারদর্শী কোনো চিকিৎসক এখানে নেই। সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে করোনা চিকিৎসার অনেক কিছুরই অভাব রয়েছে হাসপাতালগুলোতে। তারা বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাবধনতা অবলম্বন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার জানান, ইটালির মহামারি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিলো। আমাদের হুশ ফিরেছে অনেক দেরিতে। ইতোমধ্যেই আমরা চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আছি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মোঃ হুসাইন শাফায়াত জানান, গত ২৪ ঘন্টায় আরো ৪০২ জনকে হোমকোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এনিয়ে জেলায় ১৫৬২ জন হোমকোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তিনি সকলকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

সর্বশেষ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) বেনজীর আহমেদ বুধবার বিবিসিকে জানিয়েছেন, “ধরুন বাংলাদেশে ১৬ কোটির মানুষের ১০ শাতাংশের মধ্যেও যদি রোগটা ছড়ায়, সেটা হবে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে যদি পয়েন্ট ফাইভ, পয়েন্ট ফোর বা পয়েন্ট ওয়ান পার্সেন্ট মানুসের অবস্থা গুরুতর হয়, তাহলে আমরা হাসপাতালে আর চিকিৎসা পাবো না। তিনি বলেন, “এতো আইসিইউ, এতো ফ্যাসিলিটি আমাদের নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন