রাজনীতি ডেস্ক:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বিগত ১৫ বছরে দেশের সিংহভাগ উন্নয়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রোডাকশন ট্রান্সফরমেশন পলিসি রিভিউ (পিটিপিআর) অব বাংলাদেশ ইনভেস্টিং ইন দ্য ফিউচার অব এ ট্রেডিং নেশন’ শীর্ষক স্টাডির রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সালমান এফ রহমান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বিগত ১৫ বছরে দেশের সিংহভাগ উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ, কর আদায় ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ এবং রফতানি বহুমুখীকরণের ওপরও জোর দিতে হবে।
তিনি জানান, কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি ঔষধ শিল্পের সঙ্গে ওয়ালটনের মতো ইলেকট্রনিক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এবং প্রাণ অ্যাগ্রো দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে কৃষি শিল্পজাত পণ্য রফতানিতে দেশ সাফল্য অর্জন করেছে।
তবে অপ্রত্যাশিত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন সামনের দিনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে জানিয়ে সালমান রহমান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি করহার কমিয়ে পরিধি বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্মার্ট মানবসম্পদ তৈরি ও স্টার্টআপ সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি খাতে ১৫ লাখ স্টার্টআপ সৃষ্টিসহ সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করেছে সরকার। এখন দেশের ১৩ কোটি লোক ইন্টারনেটে সংযুক্ত। ২০৪১ সালের মধ্যে আরও ১০ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের বিশ্বে জীবনের প্রতিটি স্তরে বিশেষ করে ৭০ শতাংশেই প্রযুক্তি প্রভাব বিস্তার করছে। উপাত্ত নির্ভরতায় স্মার্ট হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া। উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ৩০ শতাংশ এবং এনার্জি কনজাম্পশন ২৫ শতাংশ কমেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আইটি ও হাইটেক পার্কসহ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে দেশি-বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছে। সরকারের নানা উদ্যোগ সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
মানবসম্পদ উন্নয়নে বর্তমানে সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শেষে এখন চালু হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হওয়ার পাশাপাশি আরও শক্ত অবস্থান লাভ করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে আসবে। এরপর স্বাভাবিকভাবেই কিছু চলমান সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ববাজারে আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
‘প্রোডাকশন ট্রান্সফরমেশন পলিসি রিভিউ (পিটিপিআর) অব বাংলাদেশ ইনভেস্টিং ইন দ্য ফিউচার অব এ ট্রেডিং নেশন’ শীর্ষক স্টাডির রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রোডাকশন ট্রান্সফরমেশন পলিসি রিভিউ (পিটিপিআর) অব বাংলাদেশ ইনভেস্টিং ইন দ্য ফিউচার অব এ ট্রেডিং নেশন’ স্টাডির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই স্টাডিটি দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। রিপোর্টে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এবং দেশের অর্জন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উৎপাদন ও বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণে একটি হালনাগাদ চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া উদ্ভাবন এবং ডিজিটালাইজেশনের সুবিধার ওপর গুরুত্বারোপ করে রিপোর্টে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইলেকট্রনিকসসহ উদীয়মান শিল্পগুলোর ওপর মূল দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম, র্যাপিড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রমুখ।