স্টাফ রিপোর্টার:
দেবহাটায় আনিছুর রহমান নামের এক প্রতারকের বিরুদ্ধে গ্রাম পুলিশে চাকুরি, সরকারি প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ, প্রতিবন্ধী কার্ড ও গভীর নলকূপের অনুমোদন করিয়ে দেয়াসহ সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা ও আদায়কৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রতারক আনিছুর সদর ইউনিয়নের চর-রহিমপুর গ্রামের নেছারউদ্দীনের ছেলে। উপজেলার চরবালিথায় সরকারের আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানকাজে নিয়োজিত শ্রমিক আনিছুর দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারদের আস্থাভাজন বলে প্রচার চালিয়ে গ্রাম পুলিশে নিয়োগ, সরকারি প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ, প্রতিবন্ধী কার্ড, গভীর নলকূপ ইত্যাদি সরকারি সহায়তা পাইয়ে দেয়ার নাম করে অসহায় মানুষের সাথে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে আসছিল।
শুধু তাই নয়, প্রতারণা ধরা পড়ার পড়ার নিজের আত্মসাতকৃত ২০ হাজার টাকার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে উল্টো নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রান আরএফএল গ্রুপের এক কর্মকর্তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরেরও অভিযোগ রয়েছে এ প্রতারকের বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনায় মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রতারক আনিছুরের বিরুদ্ধে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আনিছুরের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা।
প্রতারক আনিছুরের নিজ গ্রাম চর-রহিমপুরের নূর ইসলামের স্ত্রী আশুরা বেগম ও পাশ^বর্তী ঘলঘলিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগম বাদী হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগীরা তাদের লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, এলাকার সাধারণ মানুষের সামনে আনিছুর সবসময় নিজেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্যান্য সরকারি অফিসারদের আস্থাভাজন বলে জাহির করতো। এতে করে এলাকার অসহায় নীরিহ মানুষদের তার ওপর আস্থা তৈরি হয়েছিল।
একপর্যায়ে গেল বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে সরকারি সহায়তা দেয়ার নাম করে এলাকার মানুষদের থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা শুরু করে সে। সরকারি রাস্তা মেরামতের শ্রমিকের কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন সময়ে রাশিদা ও আশুরা দুজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজার করে দশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় আনিছুর।
এছাড়া পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত রাশিদা’র স্বামী আবুল হোসেনকে প্রতিবন্ধী কার্ড করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের নাম ভাঙিয়ে আরও এক হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সে। একই গ্রামের আশুরা, শাহানারা, রকিসহ অন্তত ২০/৩০ জনকে সরকারি গভীর নলকূপ পাইয়ে দেয়ার আশ^াস দিয়ে আনিছুর মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আনিছুরের একজন প্রতিবেশি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতারক আনিছুরের নিকটাত্মীয়রাও তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কয়েকমাস আগে সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ পদে ভাগ্নি জামাতা মোখলেছুরকে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার আশাস দিয়ে নির্বাহী অফিসারের নাম ভাঙিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে আনিছুর।
চাকুরি না পেয়ে পরে ভুক্তভোগীরা বারবার টাকা ফেরত চাইলে আত্মসাতকৃত সেই টাকার দায় প্রান-আরএফএল গ্রুপের এক কর্মকর্তার ঘাড়ে চাপাতে সম্প্রতি আনিছুর তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করে তাকে হেনস্থা করে চলেছেন বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনিছুরের সেই প্রতিবেশি। এ প্রসঙ্গে প্রতারিত ওই চাকুরি প্রত্যাশী মোখলেছুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আনিছুর সম্পর্কে আমার মামা শশুর।
তিনি আমাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশাস দিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তিনি সেই টাকা কাকে দিয়েছেন, কি দেননি তা আমার জানা নেই। আমি প্রান-আরএফএল গ্রুপের কোন কর্মকর্তাকে চিনিনা বা তার হাতেও টাকা দেইনি। আমি আনিছুরের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছি’।
অভিযুক্ত আনিছুর সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এককথায় আনিছুরকে প্রতারক টাইপের লোক বলে শনাক্ত করেন।
এদিকে এসকল প্রতারণার বিষয়ে অভিযুক্ত আনিছুরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিপ টিউবওয়েল দেয়ার জন্য আশুরা ও রাশিদা’র থেকে যে টাকা নিয়েছিলাম তা ফেরত দিতে চেয়েছি এবং প্রতিবন্ধী কার্ড করিয়ে দেয়ার জন্য রাশিদার স্বামীর থেকে নেয়া টাকার বিষয়টি স্থানীয় আ’লীগ নেতা আনোয়ারুল হকের মধ্যস্থতায় শিগগিরই মিটে যাবে।
’ গ্রাম পুলিশে নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে মোখলেছুরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘চাকুরির জন্য মোখলেছুরের কাছ থেকে আমি টাকা নিয়েছিলাম, তবে পরে টাকাটা প্রান-আরএফএল গ্রুপের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে দিয়েছিলাম।’
এসকল বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।