বাণিজ্য ডেস্ক:
কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত গরু হাটে উঠলেও সেই তুলনায় ক্রেতা কম। আবার কোনো কোনো হাটে ক্রেতার সমাগম থাকলেও বিক্রি তুলনামূলক অনেক কম। এর অন্যতম কারণ হিসেবে ক্রেতাদের অভিযোগ, হাটে ক্রেতার চেয়ে; এমনকি কোথাও কোথাও গরুর চেয়েও দালালদের দৌরাত্ম্য অনেক বেশি। তারাই গরুর দাম বাড়িতে দিচ্ছে।
শনিবার (১৫ জুন) সরেজমিন গাবতলী হাটে গরু দামাদামি করতে গিয়ে ক্রেতাদের এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
আহমেদুল হাসান নামে এক ক্রেতা বললেন, ‘ভাই গরু কিনতে আসার পর দেখি হাটে গরুর চেয়ে দালাল বেশি। আপনি এসে দেড় লাখ টাকা দাম বললে, পাশ থেকে এসে একজন বলবে আড়াই লাখ। এভাবে কিছু অসাধু বিক্রেতা কয়েকজন দালাল রেখেছেন। শুনেছি, গরুর দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারলে দালালদের মোটা অঙ্কের কমিশন দেয়া হয়।’
সরকারি চাকরিজীবী আবু তাহের। প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকার পশুর হাটে কোরবানির সময় পশু কেনেন। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “দুরকমের দালাল আছে হাটে। এক রকমের দালাল ক্রেতাদের সঙ্গে থাকে। হাটে ঢুকলেই দেখবেন আপনার কাছে এসে বলবে, `দামাদামি কইরা কমায়ে দিব ভাই। লাখ টাকার গরু ৬০-৭০ হাজারে পাওয়ায়ে দিব।’ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব দালালের সঙ্গে আগে থেকেই ব্যাপারীদের যোগসাজশ থাকে। আরেক ধরনের দালাল আছে যারা ব্যাপারীদের সঙ্গে থাকে। ক্রেতা এলেই দাম বাড়িয়ে বলে গরুর দাম বাড়িয়ে দেয়। দুধরনের দালালের কারণেই বিপদে পড়েন ক্রেতারা।”
এ ছাড়া হাটে গরু রাখার জায়গা নিয়ে দালালি নতুন কিছু নয় বলেও জানান আবু তাহের।
হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার কোরবানির ঈদে বেশিরভাগ গরুর দামই লাখ টাকার বেশি। ক্রেতারা বলছেন, দালালদের দৌরাত্ম্য ও ব্যাপারীদের খামখেয়ালিতে বেড়েছে গরুর দাম। অনেক ক্রেতা গরু কিনতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এদের একজন শাহিন বলেন, ‘আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা ৬-৭ ভাগে কোরবানি দিই। অধিকাংশের বাজেট থাকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকায় গরুর যে সাইজ তাতে হতাশ হতে হয়।’
আরেক ক্রেতা হাশেম বলেন, ‘গরু কেনার নিয়ত নিয়েই হাটে আসছিলাম। কিন্তু যে দাম ভাই তাতে পোষায় না। এইটা প্রতিবছরের ঘটনা। আশা করি, ঈদের আগের রাতে আইস্যা দাম কমব, তখন কিনব।’
দাম কমার বদলে বেড়ে যেতে পারে কি না- জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘হাটে পর্যাপ্ত গরু আছে। তাই গরুর দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। ঈদের আগের দিন রাতেই দেখবেন এসব গরুর দামই অনেক কমে যাবে। তাছাড়া অনেকে কেনার পর রাখার জায়গা না থাকায় আগে থেকে গরু কিনছেন না।’
শেষ দিনের অপেক্ষা করলে গরুর দাম কমে যায়, এ অবস্থায় শুরুতে ব্যাপারীরা কেন ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করেন না, জানতে চাইলে কয়েকজন ব্যাপারী বলেন, ‘শুরুতে সবার মধ্যে একটা উৎসাহ থাকে। অনেকের মাথায়ই থাকে হাটের সবচেয়ে বড় গরু কিনবেন। তখন বিশাল লাভে গরু বিক্রি করা যায়। পরে কোরবানির আগে আগে কিছুটা কম দামে গরু ছাড়লে লোকসান হয় না। শেষের লোকসানের ভয়ে শুরুতে বেশি দামে বিক্রি করি। তখন যা বেচা হয় তাই লাভ।’
হাটে দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন অভিযোগ এখনও আসেনি। কেউ এভাবে টাকা আদায় করছেন কি না, ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ধরনের অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র্যাব।’
ক্রেতা স্বল্পতার চাইতে গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন দালালদের সিন্ডিকেটের কথা। অভিযোগ, দালালদের কারণেই প্রতিবার হাটের শুরুতে গরুর দাম অনেক চড়া থাকে, যা ঈদ ঘনিয়ে এলে কমে আসে।
দালালদের এই সিন্ডিকেট যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে চাহিদা অনুযায়ী দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলেও মনে করছেন ক্রেতারা।