হোম অন্যান্যসারাদেশ দার্জিলিং কমলা ও মাল্টা চাষী আবদুল করিম যুবকদের অনুকরনীয়!

দার্জিলিং কমলা ও মাল্টা চাষী আবদুল করিম যুবকদের অনুকরনীয়!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 97 ভিউজ

 রিপন হোসেন সাজু,মণিরামপুর (যশোর):

এ বছর ১’শ ৭২ মণ মাল্টা এবং দার্জিলিংয়ের কমলা বিক্রি করেছেন আবদুল করিম। ফল বিক্রিতে খরচা বাদ দিয়েও নগদ পেয়েছেন ৬ লক্ষাধিক টাকা। এর বাইরে মাল্টা এবং দার্জিলিংয়ের কমলা লেবুর চারা বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার। আবদুল করিমের স্বপ্ন এখন আকাশ চুম্বী। তাই সে নতুন করে এ বছর আরো ১৫ বিঘা জমিতে মাল্টা এবং কমলা চাষ করেছেন। মনিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের মৃত. আকাম গাজীর ছেলে আবদুল করিম। পেশার কারণে এখন তার নামের বদল ঘটেছে। এখন জনগণের কাছে এখন মাল্টা করিম নামেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। একসময় শিক্ষিত এ যুবক আবদুল করিমকে সাংবাদিক ও নাট্যকার করিম হিসেবে চিনতো মনিরামপুরবাসী।

দীর্ঘদিন বেকারত্বের পর তাই সে মঞ্চ নাটক এবং সাংবাদিকতা ছেড়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন। যে কারণে এখন তাকে মাল্টা করিম হিসেবে সহজেই চেনেন জনগণ। বেকারত্ব ঘুচাতে ২০০৮ সালে বাড়িতে মুরগি পালন করতে খামার গড়ে তোলেন। বার্ডফ্লু রোগে তার সে স্বপ্ন সবই ম্ল¬ান হয়ে যায়। আব্দুল করিম জানান, ২০০৮ সালে বার্ডফ্লুতে তার ১ মাসে ক্ষতি হয় ৬ লক্ষাধিক টাকা। এরপর হতাশার জীবন নিয়ে সময় কাটছিল তার। এক পর্যায় কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায়ের অনুপ্রেরণায় মাল্টা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। সাড়ে ৫ বছর আগে আবদুল করিম খুলনার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১’শ ২৫ পিচ মাল্টা এবং ২৫ পিচ দার্জিলিংয়ের কমলা লেবু চারা এনে চাষ শুরু করেন। আর এ থেকেই আবদুল করিম এখন এলাকার বেকার যুবকদের অনুকরণীয় হয়ে দাড়িয়েছেন। সাড়ে ৫ বছর কমলা চাষের শুরু থেকে করিম এখন অর্ধকোটি টাকার সম্বল করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই এ বছর আরো ১৫ বিঘা জমিতে নতুন করে মাল্টা এবং কমলা চাষ করেছেন।

১৬ ডিসেম্বর দুপুরে আবদুল করিমের মাল্টা বাগান দেখতে গেলে কথা হয় তাঁর সাথে। এ সময় বাগানে প্রবেশ করতেই গাছে গাছে ফল দেখে যেন থমকে যাওয়ার অবস্থা। বাগানে বসেই আবদুল করিম এ প্রতিবেদককে আগেই তার অতীত জীবেনর গল্পকথা শুরু করেন। খুব আবেগঘন কন্ঠে বলেন, ভাই এখন আর আমাকে কেউ সাংবাদিক করিম বলে না। কেউ দাওয়াত দেয়না মঞ্চে নাটক করতে। রাত-দিন এ বাগানে পড়েই গাছের সাথে সময় যায়। দিন যায় দিন আসে বাগানেই কাটাতে হয় এ অবস্থায়। অতীতের বন্ধুরাও ভুলতে বসেছে আমাকে। তবে এখন অনেকের মতো সাংবাদিকরাও আসছেন আমার এ বাগানে।

যশোর-খুলনা থেকেও মাঝে মধ্যে আসছেন সাংবাদিক ভাইয়েরা। তবে তাদেরকে আর জানাতে চাইনে আমার অতীত পরিচয়। আমি এখন সবার কাছে মাল্টা করিম নামেই পরিচিত হয়েছি। তবে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করে চাকুরীর জন্য সময় ব্যয় না করে। এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর করিম জানান, আমার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চালের বহু শিক্ষিত যুবক এখন আমার অনুসরণ করছেন। রীতিমতো চারা নিচ্ছেন, আমার তৈরি কম্পোজসার নিচ্ছেন। অনেকেই আমার মত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। গত বছর বাদসাদ দিয়ে ফল বিক্রিতে লাখ চারেক টাকা ঘরে আসে। এরপর চারা বিক্রিসহ অন্যান্য ভাবে যা রোজগার হয়েছে তা দিয়েই এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করতে পেরেছি। তবে আমার এ মাল্টা চাষের অনুপ্রেরণা, উৎসাহ দেওয়ার ব্যক্তি কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় দাদার জন্য কিছুই করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন সহযোগীতা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবদুল করিম জানান, ওইভাবে সহযোগীতা নেওয়ার চিন্তা মাথায় আনিনি। নিজে সফল কি ব্যর্থ হবো সে চিন্তায় ঋণের দিকে এগোয়নি। তবে বেসরকারি একটি ব্যাংক বারংবার চেষ্টা করেছেন সহযোগীতা করার জন্য। কিন্তু সময়ের অভাবে সেও দিকে যেতে পারেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানান, আবদুল করিম এখনতো অনেকের পথ প্রদর্শক। তবে মঝে মধ্যে কিছু কিছু পরামর্শ নিয়ে থাকেন

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন