হোম অন্যান্যশিক্ষা দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

দাবি আদায়ে আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 51 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
দফায় দফায় আন্দোলনের পর আবারও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে যাচ্ছেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নসহ কয়েকটি দাবি আদায়ে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ১৮ জুলাই শিক্ষক মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে, ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সহকারী শিক্ষকরা। আর বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন এবং ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছ।

সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দায়ের করা রিটের রায়ে ৪৫ জনের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কিন্তু আর দেশের অন্য সব প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে জানানো হয়।

গত ৩ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অফিস আদেশে জানানো হয়, রিট পিটিশন নম্বর-৩২১৪/২০১৮-এর বিপরীতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিটকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রায় বাস্তবায়নে সম্মতি প্রদান করে। অবশিষ্ট প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

সরকারের এই পদক্ষেপের পর বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।

সেই চার দফা হলো— সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড; ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সকল প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের জিও জারি; চলতি দায়িত্বসহ সিনিয়র শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি; এবং ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলা করা ৪৫ জন শুধু দশম গ্রেড পাবেন তা নয়, বাকি ৬৫ হাজার ৫২৪ জনকেও দশম গ্রেড দিতে হবে। আগামী ১৮ জুলাই আমরা চার দফা দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ আহ্বান করেছি। মহাসমাবেশের আগে বাকি ৬৫ হাজার ৫২৪ জনের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা মহাসমাবেশ থেকেই কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেবো।

এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গত শনিবার আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করণে অন্তরায় ও সমসাময়িক সংকট নিরসন’ শীর্ষক আলোচনায় সভায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন এবং ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডের জিও জারি করতে হবে। সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে প্রধান শিক্ষক পদে ১০০ ভাগ পদোন্নতি, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি এবং প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি চালু করতে হবে। এছাড়া ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে শর্তহীনভাবে উচ্চতর গ্রেড বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ষড়যন্ত্রমূলক সরকারি ভূমি অধিগ্রহণ হতে মুক্ত করতে হবে। অবিলম্বে ৯ম পে-স্কেল ঘোষণা করতে হবে।

পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— আগামী ১৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। পরদিন ১৪ জুলাই মহাপরিচালক ও সচিবের মাধ্যমে ৭৩/২০২৩ পদোন্নতির মামলা সমাধান করে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে একই স্মারকে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

আগামী ১৪ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দাবির যৌক্তিকতা উপস্থাপনের জন্য সাক্ষাৎ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১০টা থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আমরণ অনশন।

এদিকে, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ মহাসমাবেশসহ বিভাগীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন দফা দাবিতে আগামী ৩০ আগস্ট সমাবেশ করা হবে ঢাকায়। এর আগে এই মহাসমাবেশকে সফল করতে বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগে আগামী ১২ জুলাই, সিলেট বিভাগে ১৯ জুলাই, খুলনা বিভাগে ২৬ জুলাই এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২ আগস্ট আর বরিশাল বিভাগে ৯ আগস্ট বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করা হবে। আট বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলনের পর মহাসমাবেশ করা হবে ঢাকায়।

সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবিগুলো হলো— কনসালটেশন কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ; ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন; প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি প্রদান।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘তাদের মূল দাবিগুলোর সমাধান প্রায় হয়েই গেছে। সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের যে বিষয়টি রয়েছে, আমরা মন্ত্রণালয়কে ১২তম গ্রেড হিসেবে কত খরচ হবে এবং ১১তম গ্রেড হিসেবে কত খরচ হবে তা জানিয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন