জাতীয় ডেস্ক :
সুন্দরবনে ফের শুরু হয়েছে বনদস্যুদের অপতৎপরতা। নয়ন বাহিনী নামে একটি গ্রুপ সম্প্রতি ১১ জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। অবশ্য, অপহৃত জেলেদের উদ্ধারসহ তিন দস্যুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ অবস্থায় দস্যুতা ছেড়ে ভালো পথে এলে তাদের চাকরির আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় মোংলার দ্বিগরাজ বাজার মাঠে আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু, জেলে মহাজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জরুরি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশ্বাস দেন।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণাকে অমান্য করা মানে তার নির্দেশ অমান্য করার সামিল। তাই যদি কেউ নতুন করে বনদস্যুদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকে, তাদের এখনও ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সময় থাকতে এ পথ ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে এলে তাদের জন্য বেসরকারি বা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। তাদের জন্য ভালো বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আর যদি কেউ দস্যুতার পথ বেছে তাদের জীবনে কী হবে; তা সরকারের নির্ধারণ করা আছে।
তিনি আরও বলেন, যারা বর্তমানে সুন্দরবনে দস্যুতা করে জেলেদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করছে; এরইমধ্যেই তাদের তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরাও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকর দাশ, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, পৌর মেয়র শেখ আ. রহমান প্রমুখ।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসিফ ইকবাল, রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আত্মসমর্পণ করা বনদস্যু, জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালী এবং অন্য বনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের সর্বমোট ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৪ জন দস্যু র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে বনের হারবাড়িয়ার চরাপুটিয়া, কলামুলো, তাম্বল বুনিয়া ও হরমল খাল থেকে আলাদাভাবে ১১ জন জেলেকে অপহরণ করে দস্যু নয়ন বাহিনী সদস্যরা। মুক্তিপণ চাওয়া হয় জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা। ৭ দিন পর দস্যুদের জিম্মি দশা থেকে ২১ ডিসেম্বর প্রশাসনের অভিযানের মুখে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান জেলেরা। পরে ২৬ ডিসেম্বর ভোরে চাঁদপাই রেঞ্জের মৃগামারী এলাকা থেকে তিন বনদস্যুকে গ্রেফতার করে মোংলা থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয় অগ্নেয়াস্ত্রসহ দস্যুতার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল।
এদিকে, নতুন করে সুন্দরবনে বনদস্যু প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় জেলে পরিবারের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক জেলে মাছ ও কাকড়া আহরণে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।