মাহমুদুল হাসান শাওন, দেবহাটা :
গেল প্রায় এক বছর করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারনে বন্ধ থাকার পর ১৮ আগষ্ট থেকে মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্তে খুলে দেয়া হয়েছে দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র। দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটিও একইসাথে পুনরায় উন্মুক্ত হয়েছে দর্শনার্থী ও ভ্রমন পিপাসূদের বিনোদনের জন্য।
ফলে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা দর্শনার্থীদের পদচারনায় আবারো মুখরিত হয়ে উঠেছে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি।
অপরদিকে বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ঘূর্নিঝড় ও বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন কেন্দ্রটি পূর্বের তুলনায় সৌন্দয্য বর্ধিত, আধুনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই সেখানে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।
একদিকে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এবং অন্যদিকে দর্শনার্থীদের পদচারণা, সব মিলিয়ে প্রান চাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে পর্যটন কেন্দ্রটিতে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ’র তান্ডবে পর্যটন কেন্দ্রের যেসকল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে উঠেছিল সেগুলো মেরামতের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে বৈঠক খানার সেড নির্মান, ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে মাটি ভরাট, ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে নামাজের ঘর সংস্কার, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে ওয়াকওয়ের কাচা রাস্তা ইট সোলিংকরণ, ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে কফি হাউজ নির্মান, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে গেষ্ট রুম সংস্কার, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে সেলফি পয়েন্ট পুনঃনির্মান, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে শিশু কর্নার ও অনামিকা লেকের পাশে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নির্মান, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে অনামিকা লেকের ওপর ট্রেইল সংস্কার ও ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে লেক সংলগ্ন রাস্তা সংস্কার এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও টিআর তৃতীয় পর্যায় থেকে ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার আরোও তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীর অববাহিকায় গড়ে তোলা রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি বর্তমানে জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে।
প্রায় ৮ বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দেবহাটাতে কর্মরত থাকাকালীন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের শিবনগরে ইছামতি নদীর অববাহিকায় নদী ভাঙন রোধ ও চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে ৩১.৪৬ একর জমির ওপর ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে সুন্দরবনের আদলে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে দর্শনার্থীদের কাছে। সর্বশেষ ২/৩ বছর আগে জনপ্রশাসন পদকেও ভূষিত হয় পর্যটন কেন্দ্রটি।
কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনে অব্যবস্থাপনা আর ঘূর্নিঝড় আম্পান ও ইয়াশে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন অংশ। সম্প্রতি চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমুহের সুষ্ঠ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পর্যটন কেন্দ্রটি আবারো তার অপরূপ সৌন্দয্যে ভ্রমন পিপাসূদের চাহিদা পূরনের সক্ষমতা অর্জন করবে বলে প্রত্যাশা দর্শনার্থীদের।
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি খুলে দেওয়ার পর বেড়েছে দর্শনার্থীদের আগমন অনেকটাই বেড়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দ্রুত সংস্কারের কাজ চলছে। তাছাড়া আগামীতে মাস্টার প্লানের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের কাছে আরো আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।