জাতীয় ডেস্ক:
‘সুশাসনে গড়ি সোনার বাংলা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জেলার শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক মনোনীত হয়েছেন তিনি। এ জেলায় তিনি যোগদান করেছেন ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর।
যোগদানের পর থেকেই শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। তিনি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অর্থের অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এমন মেধাবী শিক্ষার্থীদের তিনি নগদ অর্থ, বই, পোশাকসহ নানা সামগ্রী দেয়া অব্যাহত রেখেছেন।
ফরিদপুরের শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা দিকের কথা সময় সংবাদের কাছে তুলে ধরেছেন শিক্ষাবান্ধব জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার (পিএএ)।
ফরিদপুরের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধান সমস্যাগুলো কি কি বলে আপনি মনে করেন?
জেলা প্রশাসক: ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে আছে অবকাঠামোগত সমস্যা, যেমন দুর্বল ও ব্যবহার অনুপযোগী ভবন; জমি সংক্রান্ত জটিলতা; চর এলাকা হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে গুণগতমানের শিক্ষার অভাব। কিছু কিছু শিক্ষকরা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ক্লাস নিয়ে থাকেন। এছাড়া পাঠদানে প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, দারিদ্র্যতা ফরিদপুরের বড় চ্যালেঞ্জ।
জেলা প্রশাসক: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, শিক্ষাশুমারি ও জেলা শিক্ষা সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষার বর্তমান অবস্থান নিরূপণ ও সমস্যা সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত পরিদর্শন, সমন্বয় সভা, শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী সমাবেশে উপস্থিত থেকে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক: নতুন কারিকুলাম প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি মাইলফলক বলে আমি মনে করি। এ কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল হতে সাহায্য করবে এবং মুখস্ত পড়াশোনা থেকে অব্যাহতি দেবে। এ শিক্ষা হবে জীবনমুখী শিক্ষা। গাইড, কোচিং, প্রাইভেট থেকে দূরে রাখবে। মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখবে।
জেলা প্রশাসক: চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে জেলা প্রশাসন চর এলাকার বিদ্যালয়সমূহ পরিদর্শনপূর্বক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৩টি উপজেলার ট্রলার প্রদান, চর এলাকার বিদ্যালয়ে ডরমেটরি স্থাপনের প্রস্তাব, চর এলাকার শিক্ষকদের জন্য চরভাতা দেয়ার প্রস্তাব ইত্যাদি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব শিক্ষার্থীর স্কুল পোশাক, স্কুল ব্যাগ, পানির পট, টিফিন বক্স দেয়া হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের পথে সমস্যা সমাধানের উপায় কী? জেলা প্রশাসক: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রশাসন, শিক্ষাবিভাগ এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের একত্রে কাজ করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং সম্মেলনের মাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশপ্রেম জাগ্রত করে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আগ্রহ তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোযোগী করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।
জেলা প্রশাসক: সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল হতে সাহায্য করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিনোদনের সঙ্গে শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলে।
জেলা প্রশাসক: শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে সরানোর জন্য সহশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, বনভোজনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের এসব আসক্তি থেকে দূরে সরাতে পারে। নতুন কারিকুলামই মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখবে। সৃজনশীল চর্চা, ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা সকল অপচর্চা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখবে।
জেলা প্রশাসক: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষার্থী সমাবেশ বা শিক্ষক সমাবেশ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এসব সমাবেশ থেকে প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা নিরূপণ করা যায়।
জেলা প্রশাসক: অবশ্যই অতীত থেকে বর্তমানে প্রাথমিকের শিক্ষার মান উন্নত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা আগের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট। তাদের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ভিত্তি স্থাপিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক: পিছিয়ে পড়া বা কম বুঝতে পারা শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সেলিং করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মোটিভেশনের জন্য জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর ভালো ফলাফলকারীদের জন্য সংবর্ধনা আয়োজন করে। যেমন প্রাথমিক বৃত্তি ২০২২ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দেয়া। আধুনিক এবং সৃজনশীল মেধা বিকাশ সহায়ক শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ জাপান আজকে উন্নত এবং সভ্য দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়েছে: মূলত জাপানের দেশপ্রেমভিত্তিক সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার এবং মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে। একটি আধুনিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের মধ্য দিয়ে তারা আজকের সফল অবস্থানে।
মো. কামরুল আহসান তালুকদার বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. আব্দুর রশিদ তালুকদার এবং মা রাশিদা বেগম শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। তিনি পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়, ময়মনসিংহ থেকে কৃষিতে স্নাতক এবং কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেন।
কামরুল আহসান সহকারী কমিশনার হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুরে যোগদান করেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে গাজীপুরের কালীগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যানের সহকারী একান্ত সচিব এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন। চাকরিকালীন সিঙ্গাপুর, ভারত, অষ্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।
২০১৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়া ২০১৬ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার সম্মাননা লাভ করেন। ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে জাতীয় পর্যায় জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি ২৫তম বিসিএস ফোরামের সভাপতি।