হোম অর্থ ও বাণিজ্য ‘ডলার রেট যতটা বাজারভিত্তিক হবে, তত বাড়বে প্রবাসী আয়’

বাণিজ্য ডেস্ক:

টানা তিনমাস ধসের পর অবশেষে ঘুরে দাঁড়ালো রেমিট্যান্স প্রবাহ। মূলত গতমাসে চলমান সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা প্রবাসী আয়ের পালে হাওয়া লাগিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। পাশাপাশি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে প্রবাসীরাও হুন্ডি ছেড়ে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হবেন।

বুধবার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদে জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী অক্টোবর মাসে বিগত ৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

এ মাসে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

প্রবাসী আয় বাড়ার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
ডলার রেট যতো বাজারভিত্তিক হবে, তত বাড়বে প্রবাসী আয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বিনিময় হারের যে ব্যবস্থাপনা, আমরা এটিকে যত বাজারে থাকার রেটের সঙ্গে সমন্বয় করব, তত এটি ভালো অবস্থানে যাবে। এখন যেমন কিছুটা চেষ্টা করা হচ্ছে।’

প্রতিযোগিতামূলক দামে ডলার বেচাকেনার সুযোগ উন্মুক্ত হলে শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটনসহ নানা দরকারে বিদেশ ভ্রমণকারীদের মধ্যেও হন্ডির প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে গত জুন মাসে দেশে ২২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এরপর কমতির ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে নামে ১৯৭ কোটি ৩২ লাখ ডলারে; আগস্টে দাঁড়ায় ১৬০ কোটিতে; আর সেপ্টেম্বরে আসে মাত্র ১৩৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার; যা ২০২০ সালের এপ্রিলের কাছাকাছি। ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনাকালে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

এভাবে দেশের রিজার্ভ আর অর্থনীতিকে যখন ক্রমেই হতাশার চাদরে ঢেকে দিচ্ছিল নিম্নগামী প্রবাসী আয়; তখন অন্ধকার সুড়ঙ্গের ওপাশে সেই প্রবাসীদের আয়ই জ্বালালো আশার আলো। আর রেমিট্যান্স বেড়ে অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এলো।

এর কারণ মূলত ২২ অক্টোবর থেকে বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে পাঠালে প্রতি ১০০ টাকায় প্রণোদনার সঙ্গে প্রবাসীদের বাড়তি আরও আড়াই শতাংশ অর্থ বেশি দেয়ার নির্দেশনা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারের দেয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ অর্থ বেশি দিয়ে রেমিট্যান্স কিনতে পারবে ব্যাংকগুলো।

২০ অক্টোবর এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)। যা প্রবাসী আয় বাড়াতে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, একটি বড় কারণ হচ্ছে বিনিময় হার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ, এই বিনিময় হারকে বাজার রেটের কাছাকাছি নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা ফার্স্ট বেইজ সল্যুশন করতে পারিনি। এর মানে হচ্ছে, আমরা পুরোপুরি মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার ছেড়ে দিতে পারিনি। কিন্তু প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে বিনিময় হারটিকে কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার একটি চেষ্টা চালানো হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন