শিপলু জামান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) :
দুই ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। নদীর ওপর সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেকটা রাস্তা ঘুরে বিদ্যালয়ে যায়। বাজারে যেতেও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের একতারপুর এলাকার লোকজন এই ভোগান্তিতে রয়েছেন।
এসব ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে প্রায় এক বছর আগে এলাকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। শুক্রবার রাতে তীব্র স্রোতে সাঁকোটির একাংশ ভেসে গেছে। ফলে সাঁকো দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।গত শনিবার গিয়ে দেখা যায়, চিত্রা নদীর ওপরে থাকা সাঁকোটির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি খুঁটি আর ২০ ফুট পাটাতন এখনো ঝুলে আছে। শিক্ষার্থী ও বাজারের ব্যবসায়ীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন বলেন, তাঁরা কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা। নদীর অপর প্রান্তে মালিয়াট ইউনিয়ন। নদীর ওপর সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
রায়গ্রাম ইউনিয়নের একটি বাজার হলো একতারপুর বাজার। বাজার কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, চিত্রা নদীর ধারে একতারপুর গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশেই একতারপুর বাজার ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নদীর অপর পাশে রয়েছে একটি দাখিল মাদ্রাসা। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক’শ ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। অন্তত অর্ধশত ছেলেমেয়ে নদী পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আলাউদ্দিন বিশ্বাস আরও বলেন, তাঁদের এলাকায় একতারপুর ও মঙ্গলপোতা বাজারের অবস্থান। একতারপুর ছাড়াও দেবরাজপুর, জটারপাড়া, ভাতঘরা, পারখির্দ্দা, গয়েশপুর, ষাটবাড়িয়া, মনোহরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করে। নদীর ওপর সেতু না থাকায় কখনো নৌকায় আবার কখনো অনেকটা রাস্তা ঘুরে চলাচল করতে হয়।
ওই এলাকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ১৯৯৩ সালে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের এ সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নমূলক নানা কাজ করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের শিক্ষার্থী ফিরোজ হোসেন বলেন, তাঁরা চিত্রা নদীর ওপর একটি বেইলি সেতু নির্মাণের দাবিতে এলজিইডিসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে ঘুরেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে একতারপুর ঘাটে একটি সাঁকো তৈরি করেন। আশপাশের গ্রাম থেকে ৪০০ বাঁশ সংগ্রহ করেন। গ্রামের মানুষও এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ২৫ দিনে সাঁকোটি তৈরি করেন। বাঁশ ছাড়া এ কাজে তাঁদের খরচ হয় ৬২ হাজার টাকা। এলাকার মানুষ এই টাকা দেয়। ২০২১ সালের ২২ জুলাই সাঁকোটি চালু হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, চিত্রা নদীর তীব্র স্রোতে সাঁকোটি ভেসে গেছে। বাঁশগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে নানা স্থানে চলে গেছে। ভেসে গেছে আমাদের স্বপ্নের সাঁকোটি। এলাকার মানুষের কষ্ট আবারও বেড়ে গেছে। আমরা এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে এলজিইডির ঝিনাইদহ কার্যালয়ের নির্বাহী মনোয়ার হোসেন বলেন, সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এলাকার মানুষের প্রয়োজনে সেখানে সেতু বা বেইলি সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।