হোম এক্সক্লুসিভ জেলা প্রশাসকের ইনবক্স এসএমএস কতটুকু কার্যকর ?

জেলা প্রশাসকের ইনবক্স এসএমএস কতটুকু কার্যকর ?

কর্তৃক
০ মন্তব্য 211 ভিউজ

শহরের রাস্তাঘাট জনমানব শূন্য। আলো আধারীর মধ্যে প্রেসক্লাবের গেটের সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো। গেটের সামনে এগিয়ে এলো প্রেসক্লাবের সচিব মাহাবুব। ফিরে গিয়ে মাহাবুব বললো,ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি। কয়েক দিন আগের কথা । ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা পার হয়েছে । এখুনি ক্লাব বন্ধ করতে হবে । রাত অনেক হয়েছে । ক্লাবের গেট পার হয়ে চোখে পড়লো একটি পিকআপ ভ্যান। পিছনে ছিলো কিছু খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট। পিকআপ এর সামনে থেকে নামলেন পরিচিত এক জন নির্ববাহী ম্যাজিস্ট্রেট । সাথে ছিলেন আরো তিন জন ।

তারাও কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন । মনে হলো তারা কাওকে খুঁজছেন । কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রেসক্লাবের গেটের বিপরীতে এক জন পরিচিত গণমাধ্যম কর্মী পৌঁছালেন। সম্ভবত পিকআপ ভ্যানের ড্রাইভার চাল,ডালসহ অন্যান্য সামগ্রীসহ খাদ্য সামগ্রীর একটা প্যাকেট রাস্তা পার হয়ে পরিচিত ওই গণমাধ্যম কর্মীর হতে তুলে দিলেন । এসময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে একটি ছবিও তুললেন। পরিচিত ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৌজন্য মূলক দুই-এক মিনিট কথা বলে পিকআপ ভ্যানে উঠে পড়লেন।

তার সাথে যারা ছিলেন,তারাও একই গাড়িতে চেপে ভিন্ন গন্তব্যে রওনা হলেন । প্রেসক্লাবের সচিব মাহাবুব বলল,ডিসি সাহেবের ইনবক্সে এসএমএস করায় খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হলো । খুবই ভালো কথা । মাহাবুবকে বললাম,এভাবে কত জনের বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে ? প্রতি উত্তরে সে বলল,যারা পরিচিত ও যোগাযোগ করতে পারছে,তাদের বাড়িতে ডিসি সাহেব রাতের অন্ধকারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলায় যদি ২২ লক্ষ মানুষের বসবাস হয়,তাহলে কম-পক্ষে ১ লক্ষ পরিবার নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তারা ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে সংকোচ বোধ করে ।

খোঁজ নিয়ে জানলাম,জেলা প্রশাসকের ইনবক্সে এসএমএস করে শহরের গণমাধ্যম কর্মীর অনেকেই খাদ্য সামগ্রী পেয়েছেন। এমন কি মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই ইনবক্সে এসএমএস করে খাদ্য সামগ্রী পেয়েছেন। শহরের একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন,১০ দিন আগে ইনবক্সে প্রতিবেশী ২২ জনের নাম দিয়ে এসএমএস পাঠানো হয়েছিলো। ওই ইনবক্স কেউ দেখে বলে মনে হয় না। এরপর ডিসি সাহেবকে ফোন করে বলার পরে ১২ জনের খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়। বাকিদের পরে দেবেন বলে আশস্থ করেছেন । তালা উপজেলার এক গণমাধ্যম কর্মী বলল,এক সপ্তাহ আগে দুই জনের নাম ডিসি সাহেবের ইনবক্সে এসএমএস করে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু তার কোন সাড়া পাইনি।

এতক্ষণ লিখলাম গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে। এবার তাহলে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করুণ ? শ্যামনগরের গাবুরা ও কলারোয়ার ইলিশপুর থেকে যদি নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ গণহারে ডিসি সাহেবের ইনবক্সে এসএমএস করা শুরু করে,তাহলে কি ডিসি সাহেবের পক্ষে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কি খাদ্য সামগ্রী পোঁছে দেয়া সম্ভব হবে ? অনেকের সাথে কথা হয়েছে,তারাও বলেছে,এসএমএস পাঠিয়ে কোন সাড়া পাইনি । তবে ডিসি সাহেব কথা দিয়ে কথা রক্ষা করেছেন। বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়ে ছবি তুলেছেন,কিন্তু সেই ছবি তিনি প্রকাশ করেননি। তিনি এই সব নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মান সম্মান রক্ষা করেছেন। জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছে।

তাদের প্রতিদিনের রোজগারে সংসার ভালো ভাবে চলতো । তাদের সংখ্যাও লক্ষাধিক । মেধাবী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সন্ধ্যার পরে দেখা যায় তারা খাদ্য সামগ্রী নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে । এক জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই কয়দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি বললেন,সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে মাত্র সাড়ে তিন টন চাল পেয়েছেন। তিনি দশ কেজি হারে সাড়ে তিন শ পরিবারের মাঝে এই চাল বণ্টন করেছেন। সরকারের কোন নগদ অর্থ এখনো হাতে পাননি। নিজস্ব তহবিল থেকে আরো দেড় টন চাল দেড় শ পরিবারের মাঝে তিনি বণ্টন করেছেন।

অর্থাৎ তিনি তার ইউনিয়নে মোট ৫ শ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি হারে চাল পোঁছে দিতে পেরেছেন। সেই চাল ইতো মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তার ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজন। তার অভিমত এই সংকট কাটিয়ে উঠতে গেলে এখুনি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে । তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে মানুষ ত্রাণের দাবিতে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। খোঁজনিয়ে জানলাম তিনি তার ইউনিয়নে মাত্র তিন টন চাল বরাদ্ধ পেয়েছিলেন। ওই ইউনিয়নে ২৭ হাজার মানুষের বসবাস ।

তিন টন চাল দিয়ে কি হবে ? আরো কিছু বরাদ্ধ পেলে তার পর তিনি বণ্টন করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ নিন্মআয়ের ও শ্রমজীবী মানুষদের উসকে দিয়ে তাকে হেনস্থা করেছেন। এক পক্ষ কাল ধরে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী ও নিন্মআয়ের মানুষের ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। এভাবেই করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা মুশকিল । প্রধান মন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ সাহেব ত্রাণ বরাদ্ধ বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন। তিনি যাথার্থই বলেছেন। বর্তমান বরাদ্ধের চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ গুন বাড়ানো উচিত।

এসব সরকারি বরাদ্ধ পৌরসভার মেয়র,কাউন্সিলর,ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে অসহায় মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এবং কালেক্টরেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,ইউএনও,এসিল্যান্ড এমনকি ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করে সুষ্ঠ বণ্টন সম্ভব হবে। এবং সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমে দুর্নীতি অনিয়ম কঠিন হয়ে পড়বে। পরিশেষে জেলা-প্রশাসকের ইনবক্সে এসএমএস এর বিষয়টি নিয়ে শেষ করতে চাই। যারা ইনবক্সে এসএমএস পাঠিয়ে খাদ্য সামগ্রী পেয়েছেন তারা বেজায় খুশি। আর যারা পাননি তারা অখুশি। আর এই খুশি খুশির অনুপাত কত সেটা জেলা প্রশাসক ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না।

লেখক : সম্পাদক,দৈনিক সংকল্প,RTV এর নিজস্ব প্রতিনিধি,সাতক্ষীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন