হোম জাতীয় জীবনের নিরাপত্তা চেয়েও বাঁচতে পারলেন না নাদিম

জাতীয় ডেস্ক:

বাংলানিউজের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী নাদিম। বুধবার (১৪ জুন) রাতে জেলার বকশীগঞ্জ বাজার থেকে নিলক্ষীয়ায় বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় অতর্কিতভাবে ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়।

এ হামলায় গুরুতর আহত হন নাদিম। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করান। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাংবাদিক নাদিম।

এর আগে নিজের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ ভিডিও পোস্ট করেন নাদিম।

ভিডিওতে নাদিম বলেন, ‘আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের কাছে আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি যেন সুষ্ঠুভাবে সাংবাদিকতা করতে পারি সেটার নিরাপত্তা চাই।’

এ ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এর আগেও নাদিমকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন তিনি। তার লোকজনই এ হামলা চালিয়েছে। তার লোকজন আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আমি এর বিচার চাই।’

নিহত নাদিমের সহকর্মীরা জানান, বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার পাটহাট এলাকায় সাংবাদিক নাদিমের ওপর একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।

নাদিম হত্যার পর দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ এবং ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে নাদিম হত্যায় জড়িত সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শনিবার (১৭ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

নাদিম হত্যার প্রতিবাদে ফেনী, বরগুনা, শেরপুর প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানায় তারা।

এ ছাড়াও এ ঘটনায় প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কাতার। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে দোহায় এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশের পাঁচটি টিম মাঠে কাজ করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের আটক করা হবে। এখনও থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করেছে।

ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৮৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ চারদিনে একজন সাংবাদিক নিহত হন।

শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার বকশীগঞ্জের নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা ও বেলা সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে জামালপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন