হোম আন্তর্জাতিক জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন বাইডেন, নজরে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

এশিয়া সফরে বের হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চলতি সপ্তাহেই জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যাচ্ছেন তিনি। তার এ সফরের প্রধান লক্ষ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফরের মধ্যদিয়ে বাইডেন চীনা নেতাদের জানিয়ে দিতে চান, ইউক্রেনে রাশিয়া যেটা করছে, এশিয়ায় বিশেষ করে তাইওয়ানে সেটা করার চেষ্টা করলে ফল ভালো হবে না।

এদিকে বাইডেনের এই সফরকে ইতোমধ্যে উস্কানিমূলক হিসেবে অভিহিত করেছে চীন। বাইডেনের এ সফরের নিন্দা জানিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাংমাধ্যমে গ্লোবাল টাইমস তাদের এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, ‘চীনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়বে।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা বাইডেনের প্রথম এশিয়া সফর। এ অঞ্চলে তার প্রথম সফরের পরিকল্পনা করতে ১৬ মাসেরও বেশি সময় নিয়েছেন তিনি। যা অন্য যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি সময়। মূলত করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তার সফর বিলম্বিত হয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। যার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়াকে ভূরাজনৈতিকভাবে বিশ্ববিচ্ছিন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত করতে গত কয়েক মাস ধরে মিত্র দেশগুলোকে সংগঠিত করার চেষ্টা দেশটির প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২০ মে) থেকে এশিয়া সফর শুরু করছেন তিনি।

গত মাসের শেষ দিকেই বাইডেনের এই সফরের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউস থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়, ২০ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আরও বলা হয়, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যেই বাইডেনের এ সফর।

রয়টার্স জানিয়েছে, সফরকালে প্রথমে সিউলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়লের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাইডেন। এরপর টোকিওয় জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও উত্তর কোরিয়ার প্রভাব নিয়ে দেশ দুটির নেতাদের অভিন্ন উদ্বেগ রয়েছে। এবং এই প্রভাব মোকাবিলায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জোট গড়ে তুলতে আগ্রহী তারা।

এই অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘদিনের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে পাশে চাই যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকরাও তেমনটাই বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের এশিয়া বিষয়ক বিশেজ্ঞ ইভান মেডিরোস বলেন, ‘বাইডেনের এই সফরের প্রধান লক্ষ্য মূলত পূর্ব-এশিয়ায় একটি জোট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। যার উদ্দেশ্য তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের যেকোনো পদক্ষেপ ঠেকিয়ে দেওয়া।’

জাপানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাহম ইমানুয়েল বলেছেন, বাইডেনের এ সফর চীনের জন্য একটা বড় বার্তা যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটা স্থায়ী ও শক্ত উপস্থিতি রয়েছে।

জাপান সফরকালে কোয়াড জোটের নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বাইডেন। বৈঠকে তিনি প্রযুক্তিগত উদ্যোগ ও সামরিক সক্ষমতার আধুনিকায়নে সহযোগিতা জোরদারের প্রস্তাব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বাইডেন প্রশাসন বারবার এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে কমিউনিস্ট চীনের উত্থানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

গত মাসের শেষ দিকে হোয়াইট হাউস প্রেস সচিব জেন সাকি জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাইডেন নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও পারস্পরিক সমঝোতার বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।

চার দিনের এই এশিয়া সফর প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের চলমান মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেমনটা তিনি নিজেও বলেছেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মধ্যে বাইডেন বেশ জোর দিয়েই বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জোট নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে ‘নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলা’ বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন