জবি প্রতিনিধি:
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গত ১৫ মার্চ আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্তে প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। একমাস পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন।
অবন্তিকার মোবাইলের কল লিস্ট, সর্বশেষ কল রেকর্ড, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটিং স্ক্রিনশটের মতো কিছু তথ্য কুমিল্লার স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি। তথ্য গুলো দিব দিব করে দিচ্ছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। এগুলো পেলে তদন্তের কাজে গতি আসবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেন।
গত ১৫ মার্চ রাত ১০ টার দিকে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অভিযুক্ত করে ফেসবুকে পোস্ট দেন জবি ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা । এর পরই কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন তার নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি। অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠী বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে আটক আছেন। আত্মহত্যার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, কমিটির সদস্যরা কুমিল্লায় গিয়ে অবন্তিকার পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের মতামত জানার চেষ্টা করেছে। পরে কারাগারে আটক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর সাথেও কথা বলেন তারা।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত রিপোর্ট আমরা গুছিয়ে আনছি। কিছু তথ্য আমারা কুমিল্লার স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে চেয়েছি। সেগুলো দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো পাইনি। তদন্তের স্বার্থে আমাদের কিছু ডিজিটাল এভিডেন্স যেমন- অবন্তিকার মোবাইলের কল লিস্ট, সর্বশেষ কল রেকর্ড, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটিং স্ক্রিনশট প্রয়োজন। এছাড়াও মোবাইলে যদি আরো গুরুওপূর্ণ কোনো তথ্য থাকলে সেটা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছি। এগুলো পেলে কাজের সুবিধা হবে।
আমরা তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি তদন্তের স্বার্থে কিছু তথ্য গোপন রাখতে হলে সেটা গোপন রাখবেন। আইনগত জটিলতা বাদে যতটুকু তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করা যায় তা শেয়ার করবেন। এতে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। আইনানুযায়ী যতটুকু তথ্য আমরা দিতে পারি, তা অবশ্যই আমরা দিবো। তাছাড়া আমাদের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম এখনো চলমান আছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শিবেন বিশ্বাস বলেন, আমরা মোবাইল ফরেনসিক ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি। যার ফলে তদন্তের কার্যক্রমে দেরি হচ্ছে।
তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্তে যদি অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তবে তাকে আমরা গ্রেফতার করবো। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম কবে শেষ করতে পারবো তা পুরোপুরি নির্ভর করছে ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন পাওয়ার উপর।
আত্মহত্যা আগে দেয়া ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অনলাইন ও অফলাইনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন। প্রতিকার চেয়ে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে বারবার অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পাননি। উল্টো সহকারী প্রক্টর তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন বলেও উল্লেখ করেন সেই ফেসবুক পোস্টে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন মাসুম বিল্লাহ, সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ঝুমুর আহমেদ এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) রঞ্জন কুমার।