হোম খুলনাযশোর “ছোট  নদীর বড় দুঃখ” ভবদহের সেচ প্রকল্পে নদী মরছে

“ছোট  নদীর বড় দুঃখ” ভবদহের সেচ প্রকল্পে নদী মরছে

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 48 ভিউজ
রিপন হোসেন সাজু:
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ নামকস্থানে শ্রী নদীর উপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল।
তবে সমায়ের ব্যবধানে স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প  ধরা দিয়েছে যশোরের দুঃখ হয়ে।
সরেজমিনে  নদী  ঘুরে দেখা যায় ২১ গেটের উপর ১৩ টি এবং ৯ গেটের উপর ৫টি মোটরপাম্প বসানো আছে,সাথে আরো ৪ টি পাওয়ার পাম্প।
 আর দীর্ঘদিন নদী খনন করে সে মাটি নদীর ভেতরেই রাখা হয়েছে। ফলে নদী পরিণত হয়েছে নালাতে। ৯ গেটের সামনে দেখা যায় নদীর তলদেশ  উচু হয়ে আছে কোন রকমে নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কপালিয়া ব্রিজের কাছে দেখা যায় নদীর প্রস্ত ১০-১২  ফিট,গভীরতা ৪-৫ ফিট। মনে হয় লাফিয়ে পার হওয়া সম্ভব। নদীর গভীরতা আছে।
বরণী শশ্মান ঘাট এলাকায় দেখা যায় নদীর গভীরতা আছে ৪-৫ ফিট,জোয়ারে প্রস্থ ১০-১২ ফিট। রানায় পালপাড়া ব্রিজের নিচে দেখা যায় প্রস্থ আছে ২০-২৫ ফিট,গভীরতা মাত্র ৪-৫ ফিট।
যশোর জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর,  সদর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া অঞ্চল মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত।
 যশোর টাউনসহ এ অঞ্চলে বৃষ্টির পানি ও উজানের পানি উল্লেখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ভাটিতে নিষ্কাশিত হয়। মুক্তেশ্বরী-টেকা- শ্রী-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী সিস্টেম দুটি কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুরে মিলিত হয়েছে এবং মিলিত প্রবাহ ভদ্রা-তেলিগাতী-গ্যাংরাইল নাম শিপসা নদীতে পতিত হয়েছে।
মুক্তেশ্বী-টেকা-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা এবং এর সাথে সংযুক্ত খাল গুলোর মাধ্যমে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর ও যশোর সদর(অংশিক) এর প্রায় ৫৩টি ছোট বড় বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। সমুদ্রের নোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা – শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইস নির্মাণ করা হয়।
 পরবর্তীতে আশির দশক পর্যন্ত ভবদহ স্লুইসের সুফল ভালভাবে পাওয়া যায়। সত্তরের দশকের পর হতে এই অঞ্চলে নদীগুলোর মূল উৎস্য প্রবাহ পদ্মা হতে বিছিন্ন হওয়ায় সাগর বাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে নিক্ষেপিত হতে থাকে। একারণে শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর হতে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে হরি-টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী ও এর সংযুক্ত খাল গুলোর তলদেশে নিক্ষেপিত হয়ে ভরাট হয়ে যায় পড়ছে।
 বছর চারেক আগেও ভবদহ সুইটগেট হতে শিপসা নদী হয়ে বড় বড় মাছ ধরা  ট্রলার চলাচল করতে পারতো।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূল সিন্ধান্তে ভবদহের সুইচ গেট বন্ধ করে সেখানে মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায় বলে দাবী ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের। আর এ সেচ প্রকল্প ফলেই নদী দ্রুত সমায়ের মধ্য ভরাট হয়ে পড়ছে।
 নদীর পাশে পলি জমে থাকা স্থান দখল হতে শুরু করেছে, নদীর পাশ জুড়ে স্থাপন করা হচ্ছে ছোট বড় মাছের ঘের, স্থাপনা। এমনী ঝতিমত পাকা স্থাপনা  সরকারী আবাসন প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন,  নানা রকম ষড়যন্ত্রে,  পানি উন্নয়ন বোর্ড  এ জনপদকে জিম্মিকরে লাভবান হতে চেয়েছে।
তবে তা আর হতে দেওয়া হবে না।
 ডুমুরতলা গ্রামের শিবপদ বিশ্বাস জানান ভবদহের জলাবদ্ধতার  সমাধান হলে একটি মহলের আয়ের উৎস্য বন্দ হবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে প্রজেক্ট নিয়ে দূরর্ণীতি করতে পারবে না।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন টি আর এম ছাড়া বিকল্প কোন উপায়ে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব না। সরকার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা যত দ্রুত সম্ভব টি আর এম চালুর মধ্য দিয়ে ভবদহে নদী আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন