হোম রাজনীতি চীন-ভারতের টানাটানির মধ্যে শেখ হাসিনার ‌‘মাস্টারস্ট্রোক’!

রাজনীতি ডেস্ক:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে ভারত ও চীন। ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক কারণে ভারতের বিকল্প নেই বাংলাদেশের। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক অটুট রাখা প্রয়োজন সরকারের। তবে ভারত-চীন দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ফলে বাংলাদেশকে কে কতটা কাছে রাখতে পারে নতুন করে সে প্রতিযোগিতায় মত্ত দেশ দুটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র মতে, নির্বাচনের পরদিন (৮ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কে আগে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন সেই প্রতিযোগিতাও ছিল দুদেশের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের পর নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর করেন ভারতে। আর লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন গত ৯ মে বাংলাদেশে এসে প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা।

এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বারবারই কৌশলী জবাবে বুঝিয়েছেন, ভারতেই আগে হতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সফর।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুটা মজার ছলেই তিনি বলেছিলেন, ‌‌‘দিল্লি তো আমাদের কাছেই, বেইজিং একটু দূরে।’

শোনা যাচ্ছিল, চলতি জুন মাসের শেষ দিকে নয়াদিল্লি সফর করবেন সরকার প্রধান। এরই মধ্যে ৪ জুন ভারতের নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জয়ী হয়। নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। উল্টো দিক থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদি।

সেই আমন্ত্রণ গ্রহণও করেছেন শেখ হাসিনা। শনিবার (৮ জুন) নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্তকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। এতে করে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ উপলক্ষে দেশটিতে আগে সফরও করছেন প্রধানমন্ত্রী। আবার জুলাইতে তার চীন সফর হবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে আগে করা দ্বিপাক্ষিক সফর।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‌‘নরেন্দ্র মোদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত দিয়েছেন। এটা স্বাভাবিক নিয়ম। আশপাশের অনেক দেশেই তিনি দাওয়াত দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জুন মাসে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল এবং তিনি জুনেই যাচ্ছেন, একটু আগে যাচ্ছেন আরকি।’

তিনি জানান, চীন অনেক আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে দেশটিতে সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। ভারত সফরের পর আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সম্ভাবনা আছে।

মোমেন বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা উত্তম এবং সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘উইন উইন’ অবস্থা।’

সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় — বঙ্গবন্ধুর এ পররাষ্ট্রনীতি মেনে বাংলাদেশ সব দেশকে এক চোখে দেখে উল্লেখ করে ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, চীন-ভারত দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ কোনোভাবেই কারও পক্ষ বেছে নেবে না।

‘আমরা সবার বন্ধু, কারো শত্রু না। আমাদের সঙ্গে সবারই সুসম্পর্ক। আমরা চীন সফরে গেলাম, তার মানে এই নয় যে আমেরিকা দাওয়াত দিলে আমরা সেখানে যাবো না। আমরা অবশ্যই সেখানেও যাবো,’ বলেন আব্দুল মোমেন।

১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকে ভারত এবং চীনের সম্পর্কে বৈরিতা চলে আসছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এর প্রভাব দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখতে তৎপর দেশ দুটির সঙ্গে সুষম সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন