হোম রাজনীতি চীনের সঙ্গে লড়তে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ নিয়ে আসতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাজনীতি ডেস্ক:

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল-তাকেও বলেছি, আপনারা কেবল উপদেশ আর ভয় দেখান,এতে কাজ হবে না। চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে টাকাপয়সা নিয়ে আসতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে ইন্ডিয়ান ওশন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) বার্ষিক সম্মেলন শেষে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তুলে ধরেন তার বিদেশ সফরের নানা তথ্যও। এ সময় অর্থনৈতিক মন্দা থেকে শ্রীলঙ্কা কীভাবে সফলভাবে বেরিয়ে এসেছে সেই ব্যাখ্যা দেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা গত দুবছর আইওআরএয়ের প্রধান ছিল এখন নতুন চেয়ারম্যান হয়েছে শ্রীলঙ্কা। আইওএরএয়ের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে আমার কাজ ছিল তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা সেটা হয়েছে।

এ সময় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশটি যখন মন্দার মধ্যে ছিল তখন তাদের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৬৯ শতাংশ এখন চার শতাংশ নেমে এসেছে; বর্তমানে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছে তারা।

শ্রীলঙ্কা এ সফলতা কীভাবে পেয়েছে-সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তাদের নেতৃত্বের প্রতি দেশটির মানুষের আস্থা আছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ছয়বার সরকার পরিচালনা করেছে। তার প্রতি মানুষের আস্থা আছে। যে কারণে তিনি যখনই কোনো পদক্ষেপ নেন, তাদের মানুষ সায় আছে। আগের সরকার শহরের লোকদের কথায় আয়কর অর্ধেক করে দিয়েছিলেন। তিনি সেটা দ্বিগুণ করেছেন। আবার সুশীল সমাজের মাতুব্বরদের জ্বালায় আগের সরকার অর্গানিক খাবার চালু করেছিলেন। কৃষকদের সার ব্যবহার করতে দেননি। নতুন সরকার এ নিয়ম বাতিল করেছেন। যে কারণে তাদের খাদ্যের অভাব আর নেই। আবার আগের সরকার দেশকে লকআউট করেছিলেন। বর্তমান সরকার উন্মুক্ত করেছেন। যে কারণে পর্যটক কয়েকগুণ বেড়েছে সেই সাথে বেড়েছে অর্থও।

মন্ত্রী আরও বলেন, তাদের অনেক দেনা আছে এমন কথাও প্রচার করা হয়েছে, তারা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে এ প্রচারও করা হয়েছে। চীনবিদ্বেষীরা একটু বেশি প্রচারণা করেছে। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। চীন থেকে আমরা মাত্র চার বিলিয়ন ঋণ নিয়েছি। যা আমাদের জিডিপির এক শতাংশ। কিন্তু ফলাও করে আমাদের কিছু পণ্ডিতরা বলেন, বাংলাদেশ চীনের দিকে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কারও একই অবস্থা। সেখানকার কিছু পণ্ডিত এসব কথা বলেছেন।

তবে তারা চীনের অর্থনৈতিক করিডোরে যুক্ত হবে এবং যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তাদের উন্নয়ন দরকার। উন্নয়নের জন্য পয়সা দেয় চীন এসব কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বড়লোকের দেশগুলোকে বলছি, আপনারা চীনকে প্রশয় দিতে না চাইলে, কেবল আদেশ ও সতর্কতা দিয়ে লাভ হবে না। হুমকি কিংবা উপদেশ দিয়েও লাভ হবে না। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাইলে কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে হবে যোগ করেন।

তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তাকেও বলেছি, আপনারা কেবল উপদেশ আর ভয় দেখান। এতে কাজ হবে না। চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে টাকাপয়সা নিয়ে আসনে। তিনি আমাকে বলেছেন, চেষ্টা করছেন।

শ্রীলঙ্কা আমাদের কাছ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ধার নিয়েছিল। সুদে-আসলে সেই অর্থ তারা পরিশোধ করেছে। আলোচনার ফাঁকে দেশটির প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুণবর্ধনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছি। তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাদের দুর্দিনে শেখ হাসিনা যে সহায়তা করেছেন, বারবার সেই কথা তারা স্মরণ করেছেন জানান মোমেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসার অঙ্গীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারিখটা অবশ্যই এ মুহূর্তে দেয়া যাচ্ছে না। রনিল বিক্রমাসিংহকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার হাতে কী মিরাকল আছে যে, এত সফলতা পেয়েছেন। তিনি আসলে কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা অন্য কেউ সহজে নিতেন না।

আমাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিযোগ করতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে- তাতে তারা রাজি হয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা আইন করার প্রস্তাব তাদের দেয়া হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন