মোস্তফা কামাল, নড়াইল :
চিত্রকলা জগতের কিংবদন্তী বিশ্ব বরেন্য চিত্র শিল্পী এসএম সুলতানের ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ ১০ অক্টোবর। মৃত্যু ২৯ বছর পার হলেও তিমিরেই রয়ে গেছে দেশ, জাতি তথা মানবতার কল্যাণে শিল্পীর আজন্ম লালিত সকল ভাবনা, উপলব্ধী। আর শিশু ভক্তদের দাবী তার চিড়িয়াখানা প্রতিস্থাপন ও শিশুস্বর্গ (নৌকা) ভাসানো হোক চিত্রা নদীতে। সুলতান ভক্তদের দাবী গড়ে তোলা হোক কমপ্রেক্স গড়ে তোলা হোক পর্যটক বান্ধব।
মানবিকতার ঘৃণ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ সমাজের শোষিতরাই ছিল শিল্পী সুলতানের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। যাদের প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণেই যুগে যুগে, অবজ্ঞা, আর শোষণের যাঁতাকলে নিঃস্পেষিত কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষগুলোর কঙ্কালসার অবয়বকে কখনোই মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই তো তার কল্পনার সবটুকু জুড়েই ছিল শক্তি সামর্থ্যরে প্রতীক স্থুলপেশী বহুল মানুষ। তার এই প্রতিবাদী চেতনাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যানভাসে। জীবন-জীবিকার যুদ্ধে অবতীর্ণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্থুলপেশী বহুল অবয়ব বার বার উঠে এসেছে তার তুলির আঁচড়ে। যা ছিল সুলতানের চিত্রকলার মৌলিকত্ব, যে চিত্র কর্ম দিয়ে তিনি সমাদৃত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী । জাতির জন্য কুড়িয়ে এনেছেন অফুরন্ত সম্মান ও পরিচিতি।
শিল্পীর সমাধি সৌধ, নৌ বিহারে শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কনের জন্য নির্মীত নৌকা শিশুস্বর্গ, শিল্পীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন শিশুসর্গসহ এখানকার পাড়াতে পাড়াতে ছড়িয়ে থাকা শিল্পী সুলতানের নানা স্মৃতি চিহ্ন প্রতিনিয়তই বিমোহিত করছে মানুষকে । সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা। তার চিত্র কর্ম সকলের জন্য উন্মুক্ত করা, চিড়িয়াখানা ফেরত দেওয়া ও সুলতানের স্বপ্ন ছোট শিশুদের নৌকায় নিয়ে ছবি আকা যেন বাস্তবে হয় এই দাবী আজ সকলের ।
নড়াইল জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাড আজিজুল ইসলাম বলেন,শিল্পি সুলতানকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। সুলতান যে সপ্ন দেখতেন সেটা এখনো বাস্তবায়িত হয় নাই। সুলতানের সপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার নামে নড়াইলে একটি শিশু পার্ক ও শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কনের জন্য তাঁর নির্মিত নৌকা নদীতে ভাসিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, সুলতানের স্মৃতিকে রক্ষার্থে সুলতানের আর্ট গ্যালারী রয়েছে। সুলতানে জন্মশত বর্ষে সুলতান সংগ্রহশালার উন্নয়নসহ এলাকাটি পর্যটনবান্ধব করতে বিভিন্ন কাজের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে নড়াইলের জেলা প্রসাশন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিত্রা পাড়ের মাছিমদিয়া গ্রামে সুলতান কমপ্রেক্স আয়োজন করা হয়েছে কোরানখানি ও মিলাদ মাহফিল,শিল্পীর মাজারে পুষ্প মাল্য অর্পন, মাজার জিয়ারত, শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী ।
কালজয়ী এই মহান শিল্পী ১৯৫৩ সালে বিদেশ থেকে নড়াইলে ফিরে শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। সুলতান তার নিজেস্ব অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন। বিশ্ব নন্দীত চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০আগষ্ট মেসের আলী ও মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিষ্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। শিল্পী এসএম সুলতান দূরারগ্য নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০অক্টোবর তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।