রাজনীতি ডেস্ক:
দেশব্যাপী বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা দিনের পর দিন অবরোধে সড়কে ঘটছে সহিংসতার ঘটনা। একের পর এক যানবাহনে দেয়া হচ্ছে আগুন। এতে রাজধানীবাসীর মধ্যে রাস্তায় চলাফেরায় আতঙ্ক বেড়েছে; ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। চিকিৎসকরা বলছেন, সারাক্ষণ কেউ শঙ্কায় থাকলে পরবর্তীকালে মানসিক ট্রমা হতে পারে।
অবরোধ উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে ছুটতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চড়তে হচ্ছে পাবলিক বাসে। তবে যানবাহনে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়ায় স্বাভাবিক চলাচলে ভীতি কাজ করছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের সুস্থভাবে বাড়ি ফেরা নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকেন।
সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতের অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে ১১০টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৮ অক্টোব ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর ১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি এবং ৬ নভেম্বর ১০টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়।
আগুনের এমন দৃশ্য দেখে জীবন শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা। শুধু তা-ই নয়, মহানগরীর চলাচলের অন্যতম মাধ্যম রিকশা। জীবিকার তাগিদে ছুটতে হয় রাস্তায় রিকশা চালকদের। অবরোধে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় তাদেরও।
সময় সংবাদকে এক গৃহিণী বলেন, ‘নানা প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করছে। বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় সব সময় একটা দুশ্চিন্তা কাজ করে। স্বামী কর্মক্ষেত্রে যায়, বাচ্চারা স্কুলে যায়। তারা নিরাপদে পৌঁছাতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে।’
বৃদ্ধ এক রিকশাচালক বলেন, হরতাল হোক আর যা-ই হোক, না খেয়ে তো থাকা যাবে না। জীবিকার জন্য রিকশা চালাতেই হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালাচ্ছি। তবে আমরা হরতাল-অবরোধ চাই না।
রাজনৈতিক সহিংসতার জেরে সমাজে বেড়েছে অগ্নিসংযোগ ও নানা অপরাধ। এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, কোনো কোনো অপরাধীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধভাবে কাজগুলো করা হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে এই যে একটা অপরাধের সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, এটি কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটা অশনিসংকেত।
এদিকে সারাক্ষণ ভয় ও শঙ্কা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে পরবর্তীকালে মানসিক ট্রমা হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।
জাতীয় মানসিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহসান উদ্দিন আহমেদ বলেন, হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন বাসে আগুন লাগানো হচ্ছে। কারও সামনে যখন একজন লোক আগুনে পুড়ে মারা যায়, সেটা যে দেখবে, তার ভেতর একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এতে ঘুমের সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। এ থেকে পরবর্তীকালে পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার হতে পারে।