হোম অর্থ ও বাণিজ্য চাইলেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি: কৃষিমন্ত্রী

বাণিজ্য ডেস্ক:

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, যে কেউ চাইলে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে। চীন, জাপান, ইরান, মিসর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আনতে পারবেন।

সোমবার (২১ আগস্ট) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, বাজার পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য মিশর, তুরস্ক, চায়নাসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানিকারকরা আগামীকাল থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবে। যে কেউ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চাইলে আইপিও দেয়া হবে।

এখন পর্যন্ত কেউ আইপিওর জন্য আবেদন করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। কারণ আমদানিকারকদের হাতে আইপিও আছে। সেগুলোই এখন পর্যন্ত আনা হয়নি। এছাড়া চাষিদের ঘরে অন্য বছরের তুলনায় পেঁয়াজ একটু বেশি আছে। দাম বাড়বে; তবে আকাশচুম্বী হবে না।’

সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মনিটরিং দুর্বল না। খোলা বাজার অর্থনীতি হওয়ায় ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। দাম চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম এমনিতেই কমবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ উৎপাদন ও সরবরাহ করা না গেলে, সিন্ডিকেট ভেঙে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।’

আর পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ ও এ থেকে পরিত্রানের উপায় জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশলা জাতীয় ফসল। কিন্তু পেঁয়াজের এতো ব্যাপক ব্যবহার হয়, অনেকটা সবজির মতো। পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই উপযোগী।’

তবে দেশে আগে যেসব জাতের পেঁয়াজ উৎপাদিত হত, সেগুলোর উৎপাদনশীলতা কম বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক। বলেন, ‘এরইমধ্যে দেশের কৃষি গবেষকরা উন্নত জাতের পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলোর ফলন অনেক বেশি। প্রতি হেক্টরে ২০ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।’

পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল, তাই বেশি দিন ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। তবে ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজ নিয়ে কোন সমস্যা হতো না। পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় প্রতিবছর পেঁয়াজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়নি। এতে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছেন। তবে আমদানি না করায় দেশি পেঁয়াজ কমার পাশাপাশি দাম ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দেয়া হলেও দেশে এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।’

কৃষিমন্ত্রী জানান, ‘দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায়, অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ রফতানির ক্ষেত্রে ট্যাক্স আরোপ করেছে ভারত। এতে বাংলাদেশে আমদানি কম হয়েছে। তাই দেশেও এর প্রভাব পড়ছে।’

এছাড়া ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পিজুষ গয়ালকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন হলে মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালেও পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করা হবে।

তবে রোববার (২০ আগস্ট) কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পেঁয়াজ রফতানিতে ভারত শুল্ক আরোপ করলেও বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কোনো কারণ নেই। দেশে পেঁয়াজের এতই সংকট দেখা দিলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এতদিন চুপ করে বসে থাকত না।

এছাড়া দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল ফরিদপুর, পাবনার কৃষকদের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজের মজুত আছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও দেশে দামে তেমন প্রভাব পড়বে না।

পেঁয়াজ রফতানি একেবারে নিষিদ্ধ না করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে সেদেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছি। তবে ভারতের নিজেদের দেশে সংকট দেখা দেয়ায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন