চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি:
পরিবেশ নষ্ট করে ফসলী জমিতে অবৈধ ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য চলছে প্রস্তুতি। উপজেলা চরফ্যাশনের প্রত্যন্ত অঞ্চল চর কলমি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল মৌজায় প্রায় ৫একর জমি বন্ধবস্ত নিয়ে ওই জমিতে লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরীর প্রস্তুতি চলছে। জানা গেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও ছাড়পত্র ব্যতীত ইট ভাটা চলছে অদৃশ্য অনুমোদনেই।
এছাড়াও অবৈধ এই ইট ভাটা নির্মাণসহ ইট পোড়ানোর প্রস্তুতিও এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
চর-কলমি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের অবৈধ এ ইট ভাটাটি শিফাত ব্রিক্স নামে হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও শতাধিকের বেশি বসত বাড়ির মধ্যে চালু করে ইট তৈরীতে তোরজোড় চালাচ্ছে ভাটা কর্তৃপক্ষ।
স্থানিয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া এ ভাটায় সরকারী খাস জমির সিমানা সংলগ্ন এলাকায় চলছে রাতভর ড্রেজিং। এছাড়াও ফসলী জমির পাশে ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে মাটি কেটে গভীর খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানিয় বাসিন্দা বিবি কুলসুম (৪৫) বলেন, আমাদের বসতঘরের পাশে ড্রেজিং করায় আমাদের বাড়ির জমি ফাটল ধরে মাটি ভেঙ্গে পড়ছে। খলিফা বাড়ি এলাকার মইফুল (৮০) ও নাজমা বেগম (৬০) সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে ছেলে সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। ইট ভাটাটির জন্য এখন আর এখানে বসবাস করার মতো পরিবেশ নেই, বসতবাড়িটি ভেঙ্গে যাচ্ছে ড্রেজিং এর জন্য।
ইট ভাটা সংলগ্ন খাসপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দক্ষিণ পার্শ্বে একটি সরকারি খাল থাকায় এবং ভাটা কর্তিৃপক্ষ বন্ধবস্ত নেয়া জমিতে ওই এলাকাটির সামনেই গভীর খনন করায় বাড়ীর মানুষের চলাচলসহ নানরকমের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফসলি জমির কৃষক ও একাধীক এলাকাবাসী জানান, ভাটা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পীতভাবে তাদেরকে ফসলী জমি ও বসতবাড়ী থেকে উৎখাত করার পায়তারা করছে।
এছাড়াও ওই ইট ভাটায় গিয়ে দেখা যায়,হাজার,হাজার মন কাঠ ও লাকড়িসহ গাছের গুড়ি জোড়ো করা হয়েছে। গাছ কেটে লাকড়ি তৈরী করার জন্যেও রয়েছে দুটি স’মিল। ভাটাটির দুই পাশে রয়েছে হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান ক্ষেত ও দুই পাশে রয়েছে ফলদ ও বনজ বাগানসহ শতাধিকের বেশি বসত বাড়ি। এমন পরিবেশে নেই ৫০-১০০ গজের দূরত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক ও বসতবাড়ীর বাসিন্দারা বলেন, কাচাঁ ও পাকা ধান দ্রুত কেটে নিতে হচ্ছে। ইট ভাটাটি খুবই দ্রুত চালু হবে। এমন অবস্থায় আমরা অসহায়। আমাদের কিছু করার নেই।
কান্না ভড়া কন্ঠে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার কেউ নেই আমি কোথায় যাব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী বলেন, ভাটা মালিক জয়নাল আবেদিন ও তার জামাই নুরুদ্দিন মিলে আবাসিক এলাকার ভিতরে এসে অবৈধভাবে এ ইট ভাটা তৈরী করার ফলে আমরা এখন নিরূপায় হয়ে গেছি। আমরা কোথায় যাব কার কাছে বিচার দিবো আমাদের জানা নেই। তারা আরও বলেন, এই ভাটা কর্তৃপক্ষের প্রভাবে এলাকায় মুখ খুলতে পাড়িনা।
এ ইট ভাটাটি আবাসিক বসত বাড়ি ও ফসলী জমির মধ্যখানে হওয়ায় কৃষকের ফসল ও জমিসহ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান স্থানিয়রা অধিবাসী। ভাটা কর্তৃপক্ষের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে রাজি নয়। তবে ওই ফিল্ড এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ করলেও ভাটা কর্তৃপক্ষের লোকজন তাৎক্ষনিক সেখানে উপস্থিত হওয়ায় তারা ভয় পেয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিষয়ে ওই ইট ভাটা (শিফাত ব্রিক্স) মালিক জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে ব্রিক্স ফিল্ডকে অনুমোদন দিতে চায়না। তাই কোনো ছাড়পত্র নেই। এছাড়াও পরিবেশ বান্ধব একটি ঝিকঝাক ইট ভাটার জন্য প্রায় ৮থেকে ১০ লাখ ইট পোড়াতে হয়। ৮-১০ লাখ ইট অন্য ভাটা থেকে ক্রয় করে পরিবেশ বান্ধব ইট ভাটা তৈরী করতে পাড়েন বলে প্রশ্ন করলে তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ভাটাটি পরিদর্শণ করে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে বলে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।