নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের উপকূলবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানে। এর প্রভাবে উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলাকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যে কয়টি ইউনিয়ন ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে লন্ডভন্ড হয়েছে এর মধ্যে কাশিমাড়ী অন্যতম।
খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ছয়টি স্থানে মারাত্মকভাবে নদীর বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, জমির ফসল, পশুপাখি সহ উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। ঘূর্ণিঝড় কবলিত নদীর বাঁধভাঙ্গা লোনা পানিতে প্লাবিত এলাকার আশ্রয়হীন মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টার এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে অনেকেই এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
সুপার সাইক্লোন আঘাত হানার চার দিন অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেনি এমনকি দুর্ভোগ পোহান হাজারো মানুষের কেউ কোন খবরও নেয়নি এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।
কাশিমাড়ী খেজুরআটি গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত জোবেদা বেগম জানান, প্রায় দুইযুগ আগে তার এবং দুই বাচ্চাকে ছেড়ে তার স্বামী অন্যত্র পাড়ি জমায়। এরপর থেকে ওই এলাকায় সে দুই পুত্র সন্তানকে নিয়ে এ যাবৎকাল বসবাস করে আসছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আইলাতে এবং সদ্য ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তাদের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্বামী পরিত্যক্তা জোবেদা বেগম আরো অভিযোগ করেন, ঘূর্ণিঝড় চার দিন পেরিয়ে গেল এখনো কেউ তাদের খোঁজটুকু নেইনি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে সে এবং তার দুই ছেলের পরিবারসহ সবাই পার্শ্ববর্তী কাশিমাড়ী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। তার বাড়িতে বসবাস করা তিনটি মাটির ঘর বাড়ি নদীর পানিতে ভেসে গেছে। সংসারের সমস্ত জিনিসপত্র ভেসে গেছে লবণাক্ত পানিতে। রমজানের এই সময়ে সময় মতো খেতে পারছে না তার পরিবারের লোকজন।
তাই তার ছোট ছেলে আমির হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জে চলে গেছে শ্বশুরবাড়িতে। শুধু স্বামী পরিত্যক্তা জোবেদাই নয়, এমন শত শত মানুষ হাহাকার করছে এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং দুবেলা-দুমুঠো খাবার জন্য।
এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় নদীর বাঁধভাঙ্গা পানি ঢুকছে। বাধ নির্মাণের কাজে কর্তৃপক্ষের কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, টেকশই বাধ নির্মাণ ছাড়া উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। পূর্বের মত যেনতেন ভাবে নামমাত্র বাধ বাধলে পরবর্তীতে এরচেয়েও আরো খারাপ অবস্থা হতে পারে এই উপকূলবাসীর ভাগ্যে। এমনটাই আশংকা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
এদিকে কাশিমাড়ী তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্লাবিত এলাকায় সরকারি কোন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসেনি এমনকি কোন খোঁজখবর নেননি উল্লেখ করে কাশিমাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এস, এম, আব্দুর রউফ জানান, সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডবের পর থেকে তার প্লাবিত ইউনিয়নে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্তা ব্যক্তিরা একটি বারের জন্য ফোন দিয়েও খোঁজ খবর নেননি। শুধুমাত্র সাতক্ষীরা -৪ আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার তার কাছে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জেনেছেন।তিনি সরকারের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ আরো জানান, তার ইউনিয়নের ঝাপালী টু ঘোলা খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার জায়গায় ৬ স্থানে ভেঙে গেছে। তিনি আরো জানান, ইউনিয়নের সব গ্রাম প্লাবিত। প্লাবিত এলাকা থেকে হু হু করে নদীর লবণাক্ত পানি পার্শ্ববর্তী আটুলিয়া ও কালীগঞ্জে কৃষ্ণনগর সহ আরো বেশ কিছু এলাকায় ঢুকে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নে ১৬টি সাইক্লোন সেন্টারে ১০ সহস্রাধিক লোক আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান এস, এম, আব্দুর রউফ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব থেকেই তিনি মাঠে থেকে মানুষকে সচেতন করেছেন। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরপরই স্বেচ্ছাসেবক সহ সবাইকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছি।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরপরই ইউনিয়ন বাসীকে সাথে নিয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার ঝাপালী টু ঘোলার খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাধ দেয়ার কাজ করে চলেছি।তিনি অভিযোগ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতা লক্ষণীয়। একটি বারের জন্য ফোন দিয়ে বেড়িবাঁধের খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজন তারা অনুভব করেননি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পেলে দ্রুত কাজের অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা পোষন করেন।