হোম অন্যান্যসারাদেশ গ্রামের ৪০ টাকার ডাব রাজধানীতে ১৫০ টাকা :মনপুরার ডাবের কদর বাড়ছে সারাদেশে 

মিজানুর রহমান জুয়েল, মনপুরা (ভোলা) :

ডাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসসহ অন্যান্য পুষ্টিগুণ থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ সবখানেই বেড়েছে ডাবের কদর। পাশাপাশি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডাবের দামও বেড়েছে অনেকাংশে। তাই ভোলার মনপুরার ডাবের কদর রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে। প্রতিদিন এ উপজেলার ডাব যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায়। টাকার হিসেবে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার ডাব পাঠানো হচ্ছে এই উপজেলা থেকে।

জানা যায়,রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানোর জন্য প্রতিদিন মনপুরায় অন্তত ২০টি গ্রাম থেকে ডাব সংগ্রহ করেন বিভিন্ন আড়ৎত থেকে আসা লোকজন ।বাজারে স্থানভেদে একেকটি ডাব কমপক্ষে ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা দামে ক্রয় করছেন গাছ মালিদের কাছ থেকে। প্রতিদিন লঞ্চ ঘাটে ডাবভর্তি নসিমন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো হকার উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মালিকদের কাছ থেকে ডাব সংগ্রহ করেন। পরে তাদের সংগ্রহ করা ডাব নসিমনে করে লঞ্চঘাটে এনে লঞ্চ যোগে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেন।

ডাব বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, ভ্যানচালক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাদের মতে, ডাব এখন দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। এ বিবেচনায় ডাবের উৎপাদন বাড়াতে পারলে কৃষি অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন,এই উপজেলা ডাবের কোন বাগান বা নাসারী নেই । বিভিন্ন বাড়ীতে নারকেল গাছ লাগানো হয় সেই ডাবের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই নিজ উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার পিস ডাব। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা,ভোলা,পাশের উপজেলা চরফ্যাশন বরিশাল চট্টগ্রাম থেকে বেপারীরা মনপুরা থেকে ডাব কিনে নিয়ে যান।

খুচরা ক্রেতা মো. কালু বলেন, আমরা মনপুরাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাবের আকার অনুযায়ী ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব ক্রয় করি । গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম নিয়ে ৫৫ টাকা করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে লঞ্চ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায । আগের চেয়ে মানুষের মধ্যে ডাব খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এতে করে চলছে আমাদের সংসার ।

মনপুরা লঞ্চ ঘাটের ডাব বিক্রয়তা মোঃ আব্বাস বলেন, প্রতিদিন আমরা ডাবের সন্ধানে নসিমন নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়াই। উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব ডাব সংগ্রহ করে থাকি। তারপর আড়তের মাধ্যমে বা নিজেরাই সেই ডাব বিক্রয় করি । এই ডাব বিক্রি করেই আমাদের সংসার চলে। হকাররা গাছ মালিকদের কাছ থেকে প্রতি পিস ডাব ৩০-৪০ টাকা দরে কিনে আনেন। ঢাকার বড় বড় পার্টি আমাদের প্রতি পিস ডাবের মূল্য দেয় ৫০-৬০ টাকা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি ক্রেতা বলেন,মনপুরা গ্রামের খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা দরে ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মোকামে পৌছে দেয়া পর্যন্ত বহন খরচ পথে পথে বিভিন্ন ধরনের রোড খরচ দিয়ে প্রতিটি ডাবে ৭০ টাকারও বেশি খরচ পড়ে। আমাদের কাছ থেকে আবার খুচরা বিক্রেতারা ৭৫টাকা দরে কিনে নিয়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রি করে। প্রান্তিক পর্যায়ের নারিকেল চাষিদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত হয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে দাম অনেক হলেও মূলত প্রকৃত চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না ।

ধারনা করা হচ্ছে,মনপুরা থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার পিস ডাব লঞ্চ যোগে ঢাকার যাত্রাবাড়ি,গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে ।এতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে নারিকেল সংশ্লিষ্ট শিল্পে। সবুজ ডাব পরিপক্ক নারিকেলে পরিণত হওয়ার পর সেই নারিকেল থেকে পাঁচ ধরনের পণ্য তৈরি হয়।গাছেই ডাব বিক্রি হয়ে যাওয়ার ফলে নারিকেলের উৎপাদন কমে গেছে।

রামনেওয়াজ ঘাটের ডাব ব্যবসায়ী মোঃ রফিক বলেন, মনপুরায় এখন ডাব খুরচা বিক্রয় কম হয় । শীতকালে মনপুরায় অনেক পর্যটক আসে তখন অনেক চাহিদা থাকে ডাবের। তাই এখন আমাদের খুরচা বিক্রয় বন্দ রয়েছে । আমরা গ্রাম থেকে ক্রয় করে ঢাকায় চালান করি ।

ডাবের গুণাগুণ সম্পর্কে মনপুরা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু সালেহা মোঃ ইদ্রীস জানান, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস মানুষের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। যা বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। বাজারের কোমল পানীয় পান না করে প্রতিদিন একটি করে ডাব পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কেননা কোমল পানীয়র চেয়ে ডাবের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান তাওহীদ বলেন, বাজারে ডাবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডাব উৎপাদনে খরচ অনেক কম। মনপুরায় নির্দিষ্ট করে হিসেব নেই যে কত হেক্টর জমিতে ডাব উৎপাদন হয় ।তবে বাসা বাড়ীতে ডাব উৎপাদনে এ এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের।

তিনি আরও বলেন, ডাবের উৎপাদন যেমন একদিকে বেড়েছে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে ডাব পানের প্রবণতাও অনেকাংশে বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডাবের দামও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বাণিজ্যিকভাবে ডাব উৎপাদন করা গেলে অর্থনৈতিকভাবে মানুষ লাভবান হবেন। আর্থিক বিবেচনায় ডাব এখন অর্থকরী ফসল। তাই এ ব্যাপারে কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবং ২০২২ -২০২৩ অর্থ বছরে মনপুরায় ১৫৫০ পিজ নারকেল চারা দেওয়া হয়েছে ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন