জাতীয় ডেস্ক :
দেশের জাতীয় অর্থনীতি বা জিডিপিতে ইলিশের অবদান প্রায় ১ শতাংশ। কিন্তু ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না নদী ও সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকায় মাছ শিকার করা জেলেরা। গবেষকরা বলছেন- নদীর মোহনা ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর সমুদ্রে বিচরণ করছে ইলিশ। তাই গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারের সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ তাদের।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্বের মোট উৎপন্ন ইলিশের প্রায় ৭৫ শতাংশই হচ্ছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি ইলিশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদও পেয়েছে বাংলাদেশ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মাছটি।
গবেষকরা বলছেন, ইলিশ মাছের বিচরণের উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২২ ডিগ্রি থেকে ২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনাবৃষ্টির কারণে নদী ও উপকূলবর্তী সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও বেশি। এছাড়াও পলি পড়ে ভারাট হয়ে গেছে নদীর মোহনা। তাই গভীর সমুদ্রে বিচরণ করছে ইলিশ। এ অবস্থায় ইলিশ আহরণ বৃদ্ধির জন্য নদীর মোহনা খননের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একক প্রাকৃতিক পণ্য হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান ইলিশের। কিন্তু শুধুমাত্র গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলে ব্যতিত কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছন না অন্য জেলেরা। এ কারণে দিন দিন ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন তারা। ফলে পেশা বদল করে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ফুটপাতে অবস্থান হয়েছে অনেক জেলের।
হালিম নামের এক জেলে জানান, নদীতে এবং সমুদ্রের উপকূলীয় এলাকায় কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। ঋণ শোধ না করতে পেরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে এই পেশা হুমকিতে পড়বে।
আব্দুর রহমান নামে অপর আরেক জেলে জানান, ইলিশ মাছ এখন গভীর সমুদ্রে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সবাই তো গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে পারে না। সেই সক্ষমতা সবার নেই। তাই অনেক গেলেই দিনশেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছে।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর জমাদ্দার বলেন, বর্তমান সময়ে যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় শুধু তারাই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পায়। নদী এবং সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় যারা মাছ ধরে তাদের খরচ টাকায় ওঠে না। তাই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পেতে হলে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকারের বিকল্প নেই।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করার জন্য ট্রলারসহ যেসব উপকরণ দরকার, তা পেতে কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। এক কোটি টাকা ব্যয় করে মাছ শিকার করতে সকলের সক্ষমতা নেই। তাই গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করতে হলে সরকারের এগিয়ে আসা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ এ. বি. সিদ্দিক বলেন, ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে গেছে এটা বলার সুযোগ নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্রের পরিবর্তন হয়েছে। নদী ও উপকূলবর্তী এলাকায় ইলিশ এখন আর বিচার করে না। ইলিশ বিচরণ করছে গভীর সমুদ্রে। তাই ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও নদীর মোহনা খনন করে লদীতে ইলিশ মাছ প্রবেশের পথ সহজ করতে হবে। এতে ইলিশের প্রজননও বৃদ্ধি পাবে।