হোম অন্যান্যসারাদেশ খুলনায় সাধারণ রোগের চিকিৎসায় ভোগান্তি চরমে

খুলনায় সাধারণ রোগের চিকিৎসায় ভোগান্তি চরমে

কর্তৃক
০ মন্তব্য 122 ভিউজ

খুলনা অফিস :
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে খুলনায় সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোভিড-১৯’এর উপসর্গের সাথে জড়িত কোন উপসর্গ থাকলে তাকে আর দেখছেন না চিকিৎসকরা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অসুস্থ শরীরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ঘটেছে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও। একই সাথে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও কম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও চিকিৎসক পাচ্ছেন না রোগীরা। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে এখন টেলিমেডিসিনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক্সরে বিভাগ থেকে এখন আর কোন পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয় না। এক্সরে বিভাগের বাইরে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা রয়েছে- ‘এক্স-রে এর লিখিত কোন রিপোর্ট দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র ইমেজ দেওয়া হয়।’ এ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ সালাহউদ্দিন। তাকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

এ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ইকো মেশিনটি প্রায় মাস খানেক ধরেই নষ্ট। হার্টের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীদের ইকো করাতে হয় বাইরে থেকে। শুধুমাত্র এক্স-রে বা ইকো বিভাগে নয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও পড়ছে ভোগান্তিতে। হার্ট, লিভার বা ফুসফুসে আক্রান্ত রোগীদের শাসকষ্ট থাকে।

এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসলেই তাকে খুমেকের ফ্লু কর্নারে ভর্তি হতে বলা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের করোনা পজেটিভ না থাকলেও চিকিৎসা মিলছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে এরা আবার ভর্তির পরে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েকদিন আগে খুমেকে ফ্লু কর্ণারে আসা এক করোনা পজেটিভ রোগীর রিপোর্ট ভুল করে অন্যজনকে দেয়া হয়। সেই আক্রান্ত রোগীকে ফ্লু কর্নারে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আরও দুই জন করোনা পজেটিভ হয়। এরপর সেই ফ্লু কর্নারের দায়িত্বরত চিকিৎসককে অন্যত্র বদলী করা হয়।

সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ অঞ্চলের সব থেকে বড় এ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫শ’। তবে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে স্বাভাবিক অবস্থায় হাসপাতালে দিনে রোগী ভর্তির সংখ্যা থাকত ১ হাজার থেকে ১২শ’। করোনা পরিস্থিতিতে বর্তমানে সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’। গত ২৫ জুন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯৮ জন, ২৪ জুন ৪শ’, ২ জুন ৪২১ জন এবং ২৩ জুন ৪২৩ জন। অন্যদিকে বহির্বিভাগেও রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

শনিবার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিসিন, কার্ডিওলজি, চর্ম, ইএনটিসহ বিভিন্ন বিভাগের বাইরে রোগীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে চিকিৎসক ছিলেন একজন করে। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার এই সময়ে চিকিৎসকরা ভাগ করেই রোগী দেখছেন।

খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মনিরুল ইসলাম, খাদেজা বেগম, আনোয়ার হোসেন নামের একাধিক রোগী জানান, তাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে। এজন্য শ্বাসকষ্ট হয় মাঝে মাঝে। ডাক্তার বলেছেন ফ্লু কর্নারে ভর্তি হতে। এখন তারা চিন্তায় আছেন ভর্তি হবেন কিনা?

রোগীর চিকিৎসা প্রদান এবং পরীক্ষা নীরিক্ষার এমন হালের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সি মোঃ রেজা সেকেন্দার বলেন, এক্স-রে বিভাগে এমন নোটিশ কে দিয়েছে আমি তো জানিনা। পরিচালকের অনুমতি ছাড়া এমন কাজ কেউ করতে পারে না। আমি এখনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলকে ডেকে কৈফিয়ত তলব করবো। তিনি বলেন, করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে সকল চিকিৎসক তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

খুলনা সদর হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, এখানে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখানেও সর্দি, কাশি বা জ¦র উপসর্গের কোন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসলে তাকে খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্ততঃ ৫শ’ রোগী ভর্তি থাকত। তবে এখন তা কমে দেড় থেকে ২শ’তে নেমে এসেছে।

রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ জানান, ‘হাসপাতালে এখন রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে গেছে। ফলে ভর্তির হারও কমেছে। চিকিৎসকরা উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কেউ যাতে কষ্ট না পায় সে বিষয়টিও দেখছেন তারা। এরপরও কোন অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি’।

অন্যদিকে খুলনার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও যথাযথ চিকিৎসা মিলছে না রোগীদের। হাসপাতালগুলো অনেকটাই রোগী শুণ্য। কয়েকদিন আগে কয়রা উপজেলা থেকে হার্ট ও এ্যাজমার সমস্যা নিয়ে আসা জসিম উদ্দিন নামে এক রোগীর আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন ছিল। তবে এ সুবিধা সম্বলিত কোন প্রাইভেট হাসপাতাল তাকে ভর্তি করেনি। ফলে হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে করতে পথেই তার মৃত্যু হয়।

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত এক স্কুল ছাত্রকে ভর্তিই করেনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারি তিনটি ক্লিনিক। পরে বিনা চিকিৎসার মারা যায় ওই শিক্ষার্থী।

খুলনা বিএমএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, খুলনার অন্ততঃ ৬০ শতাংশ রোগীর সাপোর্ট দেওয়া হয় বেসরকারি চিকিৎসা সেবায়। সেখানে কোন সাপোর্ট না পাওয়ায় সব চাপ এখন নগরীর অন্যতম বেসরকারি হাসপাতাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালটিতে। এটি ৮০ শয্যা বিশিষ্ট। তবে এখানে শনিবার ভর্তি রোগী ছিল মাত্র ২০ জন। যার মধ্যে প্রসূতি এবং অর্থপেডিক্সের রোগীই বেশী। ৫০শয্যা বিশিষ্ট নগরীর নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে রোগী রয়েছে মাত্র ১৮জন।

বেসরকারি চিকিৎসা সেবার বিষয় নিয়ে খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আমরা বিএমএ’র পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কোন সাপোর্ট পায়নি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তদারকি করছে না মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর। ফলে মানুষ বেহাল হয়ে পড়েছে। সরকার লাইসেন্স দিয়েছে ব্যবসা করার জন্য। মহামারিতে এখন মালিক পক্ষ দোতলায় বসে আছে। তাদের নামানোর দায়িত্ব সরকারের। সেই উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে না। মানুষ একদিকে অভিভাবক শুণ্য অন্যদিকে মহামারি। দুইয়ে মিলে নাজেহাল সাধারণ জনগন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন