হোম অন্যান্যসারাদেশ খুলনায় ব্যবসায়ীর লাশ নিয়ে শহর ঘুরেও গোসলের জায়গা মিলল না

খুলনায় ব্যবসায়ীর লাশ নিয়ে শহর ঘুরেও গোসলের জায়গা মিলল না

কর্তৃক
০ মন্তব্য 170 ভিউজ

খুলনা অফিস:
করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা এলাকার মটর পার্টস ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আলী (৫৮)। কিন্তু গোসল করিয়েই তাকে এলাকায় নিতে হবে- এমন ফরমান জারি করেন তারই ঘনিষ্ট বন্ধু বেলায়েত হোসেন। আর এ ফরমানের পরই ঘটে যত বিপত্তি। অগত্যা মৃতের স্বজনরা লাশ নিয়ে সারা শহর ঘুরেও কোথায় তাকে গোছল করানোর মত সামান্য জায়গাটুকু পেলেন না। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে কিছু মানবিক গুনসম্পন্ন মানুষের উদ্যোগে নিজ এলাকাতেই ব্যবস্থা হয় গোছল ও দাফনের।

মৃত মোহাম্মদ আলী মানিকতলা এলাকার আদনান মটরস নামক মটর পার্টস’এর দোকানের মালিক। তিনি স্থানীয় মানিকতলা জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার ছিলেন।

মৃতের স্বজন ও স্বেচ্ছাসেবী দাফন টিমের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ি মোহাম্মদ আলী দাঁত ব্যাথা, এ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে সোমবার (১৩ জুলাই) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান। এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক করণীয় জানতে মৃতের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম তার ভাইয়ের বন্ধু মানিকতলার বি হোসেন এন্ড কোম্পানির মালিক ও মানিকতলা মসজিদ কমিটির সভাপতি বেলায়েত হোসেনকে জানান। তখন বেলায়েত হোসেন তাকে বলেন, হাসপাতাল থেকে বা বাইরে যে কোন জায়গা থেকে যেন তাকে গোছল করিয়ে নেয়া হয়। তা নাহলে এলাকাবাসী লাশের গোছল করাতে দিবে না। এ কথা শুনে কিংকর্তব্য বিমুঢ় ও হতবিহবল হয়ে পড়েন সাইফুল। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এ সময় তিনি খুলনার উত্তর ডুমুরিয়ার ইমাম-উলামা পরিষদ কর্তৃক গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকওয়া ফাউন্ডেশনের দাফন টিমের স্মরণাপন্ন হন এবং তাদের সহযোগিতা চান।

দাফন টিমের প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মৃতের ভাই আমাদের দাফন টিমের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা মঙ্গলবার ফজর বাদেই রওনা হই। খুলনা মেডিকেলে যাবার পর মৃতের ভাই বলেন আমাদের মহল্লায় গোসল করাতে দিবেনা। তাই তৎক্ষনাত শহরের বসুপাড়া কবরস্থানের গোসল খানায় লাশ নিয়ে গেলে সেখানকার দায়িত্বে থাকা রেজাউল জানায় এখানে গোসলের ব্যবস্থা নেই। অনেক অনুরোধ করেও কোন ফল হয়নি। তখন তিনি নিরালা কবরস্থানের কেয়ার টেকারের সাথে যোগাযোগ করলে সেও সাফ জানিয়ে দেয় সেখানে গোছলের কোন বন্দোবস্ত নেই। একইভাবে তিনি কেসিসি পরিচালিত নগরীর গোয়ালখালী কবরস্থানে যোগাযোগ করেও কোন ব্যবস্থা হয়নি। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে মৃতের নিজ এলাকায় লাশ নেয়ার উদ্যোগ নেন তিনি।

ওয়াহিদুজ্জামান আরও জানান, লাশ নিয়ে মানিকতলায় যাবার পর কিছু লোক ওখানে গোসল করাতে দিতে নারাজ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি তাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডা, এমনকি মারমুখী অবস্থা তৈরী হয়। এক পর্যায়ে তিনি জেলা প্রশাসনের অফিসে ফোন করে সহযোগিতা চান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে স্থানীয় শহীদ জিয়া কলেজ সংলগ্ন দারোগা মসজিদ চত্বরে তাকে গোসল করানো হয়। এছাড়া মানিকতলা মসজিদ চত্বরে জানাজা শেষে স্থানীয় মহেশ্বরপাশা কালিকাবাড়ী কবরস্থানে মৃত মোহাম্মাদ আলী’র দাফন সম্পন্ন করা হয়।

মৃতের ভাই সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেলায়েত হোসেনের কাছে পরামর্শ নিতে যাওয়াটাই তাদের চরম ভুল হয়েছে। তিনি বাজার কমিটি ও মসজিদ কমিটিসহ বিভিন্ন লোকের নাম বলে তারাও তার ভাইকে এলাকায় গোছল করাতে দিবে না বলেও জানান তিনি। এমনকি হাসপাতালে লাশ রেখে কয়েক ঘন্টা পালিয়ে থাকলে হাসপাতালের স্টাফরাই গোছল করিয়ে রাখবে বলেও বেলায়েত পরামর্শ দেন তাকে। এ কারণে প্রথমে তিনি ভাইয়ের লাশ নিয়ে এলাকায় যেতে ভয় পান। কিন্তু দাফন টিমের সহযোগিতায় লাশ নিয়ে গেলে এলাকাবাসীই এগিয়ে আসেন। বেলায়েত ও তার লোকজনের অমানবিক আচরণে তিনি মর্মাহত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

দাফন টিমে উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়কারী হাফেজ মো: ওয়াহিদুজ্জামান, মাও: শরীফুল ইসলাম, মাও: ইলিয়াস হোসাইন, মো: আব্দুস সোবহান খান, মাও: আল আমীন, হাফেজ আবু রায়হান, মৌলভী আব্দুল হাই, মো: ওয়াক্কাস আলী, মো: ইমাম হাসান, মো: জাহিদুল ইসলাম, মো: আব্দুল হালিম প্রমুখ।

অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে দাফন টিমের প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, তারা এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৫জন এবং উপসর্গে মৃত ২জনের লাশ দাফন করেছেন। কিন্তু গোছল করাতে বাঁধা দানের মত ঘটনার মুখোমুখি হননি। এটা তাদের নতুন অভিজ্ঞতা। গোছলের পানিতেও করোনা ছড়াতে পারে- এমনই প্রচার করা হয় বলেও জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন