আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদি প্রধানমন্ত্রী ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলেছে, খাসোগির বাগদত্তার করা মামলা থেকে যুবরাজ মোহাম্মদকে দায়মুক্তি দেয়া উচিৎ।
জামাল খাগোসি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের একটি আদালতে মামলা চলছে। সেই মামলার অভিযুক্তদের তালিকা থেকে এখন প্রিন্স সালমানের নাম কেটে দেয়া হবে। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসের ভেতর সৌদি রাজতন্ত্রের কঠোর সমালোচক জামাল খাগোসিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একদল ঘাতক তাকে প্রথমে গলাকেটে, পরে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে। এরপর তার হাড়-মাংস এসিড দিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদকে আসামি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা ঠুকে দেন তার বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিস। মামলায় হবু স্বামী হত্যার ন্যায়বিচার দাবি করেন তিনি। সেই মামলায় ওয়াশিংটনের ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট আদালতে বিচার চলছে।
তবে এ মামলা খারিজের জন্য কোর্টে আবেদন করেন যুবরাজের আইনজীবীরা। তারা আদালতে বলেন, রাজকীয় আদেশে পাওয়া পদমর্যাদাবলে (প্রধানমন্ত্রী) যুবরাজ বিচার থেকে দায়মুক্তির অধিকারী। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আদালতে যুবরাজের আইনজীবীদের সুরেই সুর মিলিয়েছে বাইডেন নেতৃত্বাধীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পদাধিকার বলে সৌদি যুবরাজের দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
যুবরাজকে দায়মুক্তি দেয়ার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খাগোসির বাগদত্তা হেতিজে চেঙ্গিস। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘জামালের আজ আরেকবার মৃত্যু হলো। আমরা ভেবেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে হয়তো ন্যায়বিচার দেখব। কিন্তু আবারও টাকাই জিতল।’
কয়েক বছর ধরে কার্যত মোহাম্মদ বিন সালমানই সৌদি শাসন করছেন। তার বিরুদ্ধে খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করে আসছেন যুবরাজ। তবে সৌদির নেতা হিসেবে তিনি দায় নেন।
সম্প্রতি এক রাজকীয় ফরমানে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তার বাবা বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। এ নিয়োগের আগে তিনি দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জ্বালানি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার জন্য গত জুলাইয়ে সৌদি সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ওই সফরে এক বৈঠকে যুবরাজকে বাইডেন বলেন, খাসোগি হত্যার জন্য তাকে (যুবরাজ) দায়ী বলে মনে করেন তিনি। তবে এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা বাইডেনের কাছেও অস্বীকার করেন মোহাম্মদ।
জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে বলে জোর দিয়ে বলেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা কলামে সৌদি যুবরাজের সমালোচনা করতেন খাসোগি। তিনি তুর্কি নাগরিক হেতিজে চেঙ্গিসকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। গিয়েই হত্যার শিকার হন তিনি।
খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে যৌথভাবে একটি মামলা হয়। খাসোগির প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মামলাটি করেন চেঙ্গিস। মামলায় যুবরাজ ছাড়াও ২০ জনের বেশি সৌদি নাগরিককে বিবাদী করা হয়। মামলায় যুবরাজের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, খাসোগি তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে সৌদির গণতান্ত্রিক সংস্কার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছেন, এমনটা জানতে পেরে যুবরাজ ও তার সহযোগীরা তাকে চিরতরে চুপ করিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেন।
যুবরাজ মোহাম্মদের দায়মুক্তি আছে কি না সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মতামত জানতে চেয়েছিলেন আদালত। বিষয়টি জানানোর জন্য ৩ অক্টোবর তারিখ ধার্য ছিল। এর মধ্যেই যুবরাজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন সৌদির বাদশাহ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা মতামত দেয়ার জন্য আদালতের কাছে আরও সময় চায়। আদালতও সময় বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। অবশেষ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য দাখিল করে বাইডেন প্রশাসন।