হোম অন্যান্যসারাদেশ খাটিয়ার বদলে কফিন দেওয়ায় লাশ কাঁধে করে নিয়ে দাফন

খাটিয়ার বদলে কফিন দেওয়ায় লাশ কাঁধে করে নিয়ে দাফন

কর্তৃক
০ মন্তব্য 74 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের ইটভাটার শ্রমিক আব্দুস সালাম (২২) জ্বর, সর্দি,কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বাড়িতে মারা যান। সালামের পরিবারের দাবি, লাশ রাখার জন্য তারা খাটিয়া চেয়েও পাননি। পরে লাশ কাঁধে নিয়ে তারা দাফন করে। এ ধরনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।

তবে গ্রামবাসী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, খাটিয়া না পাওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মরদেহ কবরে নেওয়ার জন্য একটি কফিন বক্স দেওয়া হয়েছিল। তারা সেটা নেয়নি। মূলত সালামের মৃত্যুর বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোয় তার পরিবারের লোকজন গ্রামবাসীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তবে লাশ দাফনের সময় প্রশাসন,পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুস সালাম দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরেন। ঢাকায় তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। বাবা জয়বুল মিয়ার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি মেজ। এলাকায় ফিরে হঠাৎ করেই সর্দি-জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৭ এপ্রিল তিনি মারা যান। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় স্থানীয়রা পুলিশ ও প্রশাসনকে জানায়।

পরে ওই এলাকা লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার সকালে মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা দাফনের জন্য মৃতদেহ গোসলও করিয়ে দেয়। পরিবার থেকে মৃতদেহ নেওয়ার জন্য স্থানীয় কান্দাপাড়া মসজিদে খাটিয়া চায়। মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনের অনুমতি না মেলায় তারা খাটিয়া পাননি।

বক্তারপুর গ্রামের আসকর আলী বলেন, মৃত্যুর ঘটনা গ্রামবাসী ও ইউপি সদস্য প্রশাসনকে জানানোয় সালামের মা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি শুরু থেকে প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর বিরোধিতা করেছিলেন।

একই গ্রামের কাবিল আহমদ বলেন, সালামের অসুস্থতা ও মৃত্যুর খবর প্রশাসনকে জানানো ও তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা গ্রামের মানুষের ওপর অসোন্তুষ্ট ছিলেন। লাশ দাফনের জন্য খাটিয়া নিতে কেউ বাধা বা নিষেধ করেনি। লাশ নেওয়ার জন্য কফিন দেওয়া হয়েছিল। রাগে তারা তা ব্যবহার করেননি। কাঁধে নিয়ে লাশ দাফন করেছেন।

সালামের বাবা জয়বুল মিয়া বলেন, ‘আমরা নিজের হাতে লাশ গোসল দিয়ে দাফন করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা কেউ কথা শোনেনি। গ্রামের কেউ লাশ দাফনে এগিয়ে আসেননি। পরে আমার দুই ছেলে আব্দুল খালিক ও আমি লাশ কাঁধে নিয়ে গিয়ে দাফন করেছি।’

সালামের মা সালেমা খাতুন বলেন, ‘আইনের লোক আনলে কিতা হইবো? আমার পুত করোনা রোগে মারা যায়নি। সে অসুস্থ ছিল তাই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছে। আমি গ্রামবাসীকে বলেছিলাম লাশ গোসল দিয়ে দাফন করতে। কিন্তু গ্রামের কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে বলছিলাম গ্রামের কেউ লাশের গোসল না দিলে আমার দুই ছেলেও স্বামী লাশের গোসল দেওয়ার কথা তারা তাও মানেননি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার মতবিরোধ কথা কাটাকাটি হয়েছিল।’

লক্ষীপুর ইউনিয়নের ৯ নং সদস্য মোহাম্মদ শরিফুল্লাহ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয়ে হয়তো খাটিয়া চেয়েও পায়নি বা দেয়নি। মৃত্যুর বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর পর থেকে নিহতের পরিবারের সদসর‌্যা মনোক্ষুণ্ন ছিলেন। তারা গ্রামের মানুষের সঙ্গে অশোভনীয় কথাবার্তা বলেছেন।’

এ প্রসঙ্গে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘মানুষ যতটা বলছে,আমার মনে হয় না ঘটনা এভাবে ঘটেছে। লাশ বহন করতে পরিবার খাটিয়া চায়নি। চাইলে অবশ্যই মসজিদ কমিটি দিত। মসজিদ কমিটি না দিলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ব্যবস্থা করতাম।’ লাশ নেওয়ার জন্য কফিন বক্স দেওয়া হয়েছিল, তারা তা ব্যবহার করেননি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন