ঝিনাইদাহ প্রতিনিধি :
করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের শতাধিক স্বর্ণ শিল্পী মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব স্বর্ণ শিল্পী যাদের স্থানীয়ভাবে কারিগর বলা হয়। এদের মাঝে করোনা কালিন সময়ে হতাসার ছাঁয়া নেমে এসেছে। কঠোর এই লকডাউনের কারণে কারিগরদের কোনো কাজ না থাকার কারনে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে কোনো করম বেঁচে আছেন তারা।
লকডাউনের কারনে ঈদে ছেলে মেয়েদের জন্য নতুন পোশাক কেনাতো দুরের কথা সেমাই-চিনি কিনতে তারা হিমসিম খেয়েছেন। সেই করোনা ভাইরাসের প্রথম থেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে তারা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেন। এ কারিগরদের দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজ কর্ম না থাকার কারনে পরিবার নিয়ে পড়তে হয়েছে মহা বিপদে। তাদের কপালে জোটেনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা।
তিলতিল করে জমানো টাকা দিয়ে এতো দিন কোনো মতে চললেও এখন আর বাঁচার কোনো উপাই নেই বলে জানান অনেকেই। কালীগঞ্জ উপজেলাতে হাজারের ও বেশি স্বর্ণ কারিগররা আছেন। কিন্তু কেউ ফিরে তাকাচ্ছেন না তাদের দিকে। একাধিক স্বর্ণ কারিগররা জানালেন তাদের দুঃখের কথা।
স্বর্ণ অলংকার ব্যাবহার এর ইতিহাস থেকে জানাযায় নারীরা সুন্দর পোশাক ও মূল্যবান অলঙ্কারাদি পড়তে খুব ভালোবাসতেন। পনের শতকে শাহ মুহম্মদ সগীর রচিত ‘ইউসুফ-জুলেখা’য় সেই চিত্রই পাওয়া যায়। শাহ মুহম্মদ সগীর ছিলেন গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের (১৩৮৯ থেকে ১৪১০) সভাকবি। এতে হজরত ইউসুফ (আ:) আর জুলেখার প্রেমকাহিনী হলেও এতে কবি বাংলার উপাদান ব্যবহার করেছেন।
দেখা যায় সম্পদশালী পরিবারের মেয়েরা গলার হার, মুক্তা ও হীরার কর্ণফুল, বালা এবং মূল্যবান পাথর বসানো সোনার আংটি ব্যবহার করে থাকত। শুধু সাহিত্যেই নয়, মধ্যযুগে বাংলায় আসা বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণকাহিনী থেকে এখানকার অলঙ্কারের কথা জানা যায়। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরেরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসাবে এর ব্যাবহার উল্ল্যেখ যোগ্য। করোনা নামক অতিমারির গ্রাসে সমস্ত জনজীবন আজ বিপন্ন। সখের বসে এখন আর কেউ আসছেনা গহনা বানাতে। কর্ম হারিয়েছেন এ উপজেলার প্রতেখ্য ও পরোখ্য ভাবে কর্ম রত হাজারও স্বর্ণ শ্রমিক।
স্বর্ণ কারিগর কালীগঞ্জ পৌরসভার কলেজপাড়া গ্রামের সজিব বিশ্বাস জানান, এখন আর আমাদের কোন অর্ডার-পাতি নেই তাই কাজও নেই। পরিবার এর খরচ চালানোর দাগিদে মাঝে মাঝে বাড়ী রং করা হেলপার হিসাবে কাজ করছি। তাও প্রতিদিন কাজ নেই, মাঝে মাঝে যতটুকু করতে পারছি তাই দিয়ে কোন মতে দিন পার করছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা জুয়েলারী মালিক সমিতির (বাজুস) সভাপতির ওসমান আলী জানান, করোনা কালিন সময়ে যার যার ঘরের কারিগর সেই সেই দেখা শুনা করছেন। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে কারিগরদের জন্য কোনো সহযোগিতা করিনি বা সহযোগিতা করার ও কোনো চিন্তা ভাবনা আমাদের নেই ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানন, আমি নতুন যোগদান করেছি তবে কর্মহীন সকল শ্রমিককে সহযোগিতা করা হবে। আমি স্বর্ণ কারিগরদের জন্য সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।