হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):
সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত কালীগঞ্জের নলতা শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাম পার্টনার কাম মেডিকেল অফিসার ডাঃ তানিয়া সুলতানা সিজারিয়ান অপারেশন করতে যেয়ে জরায়ু কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মৌসুমী বেগম নামে এক প্রসূতি এখন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। অন্যদিকে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানটিকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানবতার জীবন যাপন করছে ।
দিন মজুর স্বামী শরিফুল ইসলাম বহু কষ্টে ১০ ব্যাগ রক্ত জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর বাঁচা মরা নিয়ে রয়েছে আতঙ্কের মধ্যে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ মে সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সম্প্রীতি বছর খানেক আগে ৬ লাখ টাকায় দফারফা করা শ্যামনগর সদরে ডক্টরস ক্লিনিকের মালিক নাজমুল ইসলামের সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপ রত অবস্থায় ধরা পড়া আলোচিত ডাঃতানিয়া সুলতানা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এম,বি,বি,এস পাস করে বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিলের(BM&dC) অনুমোদন লাভ করে।এর পর কোন ডিগ্রী ছাড়া নিজেকে সর্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলে সাতক্ষীরা জেলায় গড়ে ওঠা অবৈধ ক্লিনিক গুলোতে হর হামেশা সিজারিয়ান, এপেন্ডিসাইড এ্যারাকনয়েড ব্লক বা স্পাইনাল,, জরায়ু, হার্নিয়া অপারেশনসহ এনেস্থিসিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করে যাবতীয় অপারেশন কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নাই।
একাধারে তিনি শেরে বাংলা ক্লিনিকের অর্ধেক পাটনার, মেডিকেল অফিসার ছাড়াও শ্যামনগর উপজেলার নগর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, দেবহাটা থানার সখিপুর গাজী সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিকেল অফিসার এর দায়িত্ব পালন ছাড়াও উপজেলার শ্যামনগরের অন্তত ৩/৫ক্লিনিক ছাড়াও কালীগঞ্জের রিডা হাসপাতাল, ঝরনা ক্লিনিক, যমুনা ক্লিনিক, উত্তর কালিগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক, নাহার ক্লিনিক সহ জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকের সাইন বোর্ডে তার নাম লক্ষ্য করা এবং সেবা দিতে দেখা গেছে। ডাঃ তানিয়া সুলতানের বিরুদ্ধে এমনই এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নলতা শেরে বাংলায় ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পার্টনার কাম মেডিকেল অফিসার ডাঃ তানিয়া সুলতানা গত ১২ মে দেবহাটা থানার সখিপুর মোড়ে অবস্থিত গাজী সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুশীল গাতি গ্রামের শরিফুল ইসলাম এর স্ত্রীকে পরিবারের কোন সদস্যদের অনুমতি ছাড়া মোটা অংকের টাকা আদায়ের ফাঁদে ফেলে ক্লিনিক মালিক ফারুক হোসেনের সহায়তায় ডাঃ তানিয়া নিজেই সার্জারি বিশেষজ্ঞ , এনেস্থিসিয়া ডাক্তার সেজে অজ্ঞান করে মৌসুমী বেগমকে তড়িঘড়ি করে সিজারিয়ান করতে যেয়ে তার জরায়ু কেটে ফেলে। এতে করে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের দায় এড়াতে দ্রুত ১৩ মে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। ওই সময় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু কন্যা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এখানে ডাঃ তানিয়া সিজারিয়ান অপারেশন করার পরিবর্তে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানায়। ওই সময় গরিব অসহায় দিনমজুর শরিফুল ইসলাম তার স্ত্রী মৌসুমীর জীবন বাঁচাতে সাতক্ষীরা খুলনা – হাসপাতালে দৌড়া দৌড়ি করতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের বেডে মৌসুমী বেগম এবংবাহিরে তার শশুর, ভাসুর সাংবাদিকদের জানান প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে সখিপুরে গাজী সার্জিকাল ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে তার স্বামী শ্বশুর পৌছানোর আগেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে ডাঃ তানিয়া সুলতানা নিজে স্পাইনালে এনেস্তেসিয়া ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন করে। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে আমাদেরকে এখান থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলে। আমরা এই ভুল অপারেশনের জন্য ডাঃ তানিয়া সুলতানা ও মালিক ফারুক হোসেনের শাস্তি দাবী করছি। এখন আমরা মা এবং বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য ছুটোছুটি করছি।
সুস্থ হয়েই এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ দায়ের করব। গত ১৯ এপ্রিল কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা গ্রামের মুজহারুল ইসলামের স্ত্রী নাসরিন সুলতানার প্রসব বেদনা শুরু হলে গ্রাম্য এক দালাল ডাক্তারের মাধ্যমে শেরে বাংলা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানেও সার্জারি এনেস্তেসিয়া ডাঃ সেজে ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম এবং তানিয়া ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে সিজারিয়ান করে বাচ্চা প্রসব করায়। পরবর্তীতে অপারেশন স্থলে ইনফেকশন হওয়ায় হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে হয়। গর্ভবতী প্রসূতি মেয়েদের খবর পেলেই যেভাবে হোক তাদের দালালদের মাধ্যমে শেরে বাংলা ক্লিনিকে এনে প্রথমে মিষ্টি কথার ফাঁদে ফেলে পরে বিভিন্ন ডাক্তারের কথা বলে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।
দেবহাটা থানার কামটা গ্রামের মফিজুল মোল্লার পুত্র একটি মসজিদের ইমাম শাহিন আলম দীর্ঘদিন যাবত পায়ের একটি ফোড়া নিয়ে ভুগছিল। ফোড়া টি পেকে পুজ জমা হলে যন্ত্রণা সইতে না পেরে মুয়াজ্জিন শাহিন আলম নলতার শেরে বাংলা ক্লিনিকে আসলে মালিক সাইদুল ইসলাম অপারেশনের জন্য ভয় ভীতি দেখিয়ে ৬/৭ লক্ষ টাকা দাবি করে নতুবা পা কেটে বাদ দিতে হবে। এ বিষয়ে অপরগতা প্রকাশ করলে ২ লক্ষ টাকায় অপারেশন করার কথা জানায়। পরে ওই মোয়াজ্জিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কোন খরচ ছাড়াই সরকারি চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে প্রতিকার চেয়ে গত ১৩ মে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত প্রচারিত হলে ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম তার ক্যাড়ার বাহিনী পাঠিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তার মসজিদে যেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য জীবন নাশের হুমকি দিয়ে আসে বলে ওই ভুক্তভোগী মোয়াজ্জিন শাহিন আলম সাংবাদিকদের জানায়। এছাড়াও কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের পাইকাড়া রহিমপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী ৩ সন্তানের সন্তানের জননী ফিরোজা বেগম দীর্ঘদিন যাবত গলার টনসিল নিয়ে ভুগছিল। বিষয়টি নিয়ে গত ১০ মে সকালে প্রথমে নলতা চৌমুহনী অবস্থিত আহসানিয়া ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে আহসনিয়া ক্লিনিক মালিক পরিচালক আব্দুল বারী প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শেরে বাংলা ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এখানে ডাঃ তানিয়া সুলতানা এবং সাইদুল ইসলামের মালিকানাধীন শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাহিরের ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করাবে বলে ভর্তি করে।
পরবর্তীতে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাঃ শাহিন রেজা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ডাঃ তামিম ইকবাল এসে শেরেবাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর অপারেশন থিয়েটারে৷ রাত দু,টোর সময় অপারেশন চলাকালীন রোগীর টনসিলের পরিবর্তে শ্বাসনালী কাটলে মারা যায়। ওই সময় নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে দ্রুত সাতক্ষীরা সি বি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। উপায়ান্তর না পেয়ে পুলিশী ঝামেলা মামলা এড়াতে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধরে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করে ধামাচাপা দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা অনলাইনে ফোলাও ভাবে প্রকাশিত হলে গাত্রদাহ শুরু হয়। ক্লিনিক মালিক সাইদুল ইসলাম এবং ডাক্তার তানিয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাতেই কালীগঞ্জের সাংবাদিকদের গ্রুপিং এর সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে কথিত এক সাংবাদিক নেতার ইন্ধনে ক্লিনিক মালিক লোক মারফত থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিতে গেলে থানার অফিসার ইন চার্জের নিকট থেকে প্রত্যাক্ষাত হয়ে ফিরে আসে। এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ডাক্তার তানিয়া সুলতানা নিকট ফোন দিলে তিনি বসে কথা বলবেন বলে জানান। তবে তার বিএমডিসির অনুমোদনের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবির এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন এর নিকট কথা বলতে বলেন তার নির্দেশ না পেলে আমি কাজ করবো। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃআবু সুফিয়ানের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে ডাঃ সালাম রিসিভ করে জানায় ফোনটা তার কাছে আছে তবে আমি বর্তমান যশোরে অবস্থান করছি। যে কারণে সিভিল সার্জন মহোদয়ের নিকট কথা বলা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও সাতক্ষীরার নিবন্ধন হালনাগাদ না থাকা ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেননি স্বাস্থ্য প্রশাসন। এতে কালিগঞ্জ উপজেলার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো অবৈধভাবে স্বাস্থ্য সেবার নামে রমরমা বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর মালিকরা সিভিল সার্জন এবং সিভিল সার্জন অফিসের বড় বাবুকে ম্যানেজ করে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর এই অবৈধ ক্লিনিক গুলো চললেও কেউ কিছু বলার সাহস হয় না। অভিযোগ করলে উল্টো বড়বাবুর অফিসে নগদ নারায়ণ, উপঢৌকন দিয়ে তুষ্ট করে।
এ পর্যন্ত কালিগঞ্জ উপজেলায় বহু ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপকর্মের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেও আজও পর্যন্ত ওই সমস্ত অভিযোগের আলোর মুখ দেখেনি । বিষয়টি স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে জেলা বাসী।