হোম খুলনাসাতক্ষীরা কালিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিস, দলিল লেখক সমিতি, দালাল সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি! ঘুষ ছড়া দলিল রেজিস্ট্রি হয়না

হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা):

দলিল লেখক সমিতি দালাল সিন্ডিকেটের হাতে অতিষ্ঠ উপজেলার সেবা প্রত্যাশীরা। সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলিল লেখক সমিতির খেয়াল খুশিমত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা সাবরেজিস্ট্রি অফিস। ঘুষ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। দলিল প্রতি ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা দায়িত্ব রত সাব রেজিস্টার এবং অফিসের বড় বাবুদের আলাদা অফিস খরচ না দিলে দলিল হয় না। এ যেন “মিলে মিশে করি কাজ, হারিজিতি নাহি লাজ “।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্টার এবং দলিল লেখক সমিতির সিন্ডিকেটের যোগাসাযোগে দুর্নীতির মহোৎসব চলে আসছে বছরের পর বছর। দীর্ঘদিন ধরে কালিগঞ্জ সাব রেজিস্টার না থাকায় সাতক্ষীরা জেলা সাব রেজিস্টার সপ্তাহে প্রতি সোমবার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কালিগঞ্জ সাব রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাধারণ ভূমি সেবা গ্রহীতাদের নালিশ জানানোর কোন জায়গা নাই। গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র উঠে আসে সাংবাদিকদের সামনে। নাম না প্রকাশ করার সত্বে একাধিক সেবা গ্রহীতা, দলিল লেখকরা সাংবাদিকদের জানান ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে দলিল লেখক সমিতি, সিন্ডিকেট, সাবরেজিস্টার অফিস জড়িত আপনারা বলবেন কাকে?

কালিগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রামচন্দ্র চক্রবর্তী কিছুদিন আগে মারা যাওয়ায় তার পরিবর্তে সহ সভাপতি ইকবাল হোসেন সভাপতির দায়িত্বপালন করছে, আর আব্দুর নুর বিশ্বাস সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে। তারা যেভাবে বলবেন সাব রেজিস্টার সেইভাবে চলবেন এবং সেই রূপে চালিয়ে যাইতেছে। এখানে সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে সাব কোবলা দলিলের পরিবর্তে হেবা বিল এওয়াজ, ওসিয়াত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তা নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সাব রেজিস্টার ও সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাচ্ছে বছরে কোটি কোটি টাকা।

সাব রেজিস্টার এর প্রত্যক্ষ মদদে ও সহযোগিতায় সমিতির দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক দলিল প্রতি ৩ হাজার টাকা শেরেস্তার নামে অতিরিক্ত ঘুষ আদায় করে সাবরেজিস্টার কে দিতে হয়। আবার দলিল লেখক সমিতি মসজিদ বিভিন্ন জাতীয় দিবস প্রোগ্রাম, সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করে নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকে। এভাবে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সমিতি অফিসের অনেকে লক্ষ্, কোটিপতি বনে গেছে। অফিসের স্বপন নামে এক নকল নিবেশের ভারতে বাড়ি এবং ১০ চাকার দুটি ট্রাক ভোমরা বন্দরে ভারতীয় মালামাল আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত আছে বলে জানা যায়।

সরকারি নিয়ম এবং অফিসের নোটিশ বোর্ডের তালিকা মোতাবেক একটি কোবলা দলিল সম্পাদন করতে ১. ৫. /.সর্বোচ্চ ২ কোটি পর্যন্ত। উৎস কর, ভ্যাট বাদে অর্থাৎ ১লক্ষ টাকার দলিলে ১৫,শত টাকা নির্ধারিত থাকলেও উৎস কর, ভ্যাট সহ একজন সেবা গ্রহীতার নিকট হতে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে থাকে। দলিল লেখক সমিতি চাহিদা মাফিক টাকা না পায় তবে কাগজপত্রের বিভিন্ন ত্রুটির অজুহাতে হয়রানি সহ ৫ থেকে ৩০ /৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। তা না হলে সমিতির কোন ঘরে দলিল লেখা বা রেজিস্ট্রি হয় না। এই সমস্ত হয়রানির ভয়ে সেবা গ্রহীতারা কেউ প্রতিবাদ বা মুখ খুলতে সাহস পায় না। এইভাবে সাব রেজিস্টারের সামনে ঘুষের লেনদেন হলেও দেখার কেউ নেই বলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।

সাব রেজিস্টার রিপন মুন্সীর নিকট কথা বলতে কালিগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে সাবরেজিস্টার রিপন মুন্সির অফিসে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের প্রধান সহকারি বিদেশ কুমার ঘোষ ওরফে মন্টুর নিকট সাব রেজিস্টারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান আজ অফিস করবেন না। সাব রেজিস্টারের মোবাইল নাম্বার জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে অনুমতি ছাড়া দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবং তার অফিসের স্বপন বাবুর নিকট খোঁজ করতে বলেন।

এ বিষয়ে নকল নিবিস স্বপনের নিকট জানতে চাইলে তিনিও দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সাব রেজিস্টার রিপন মুন্সির সহকারীর নিকট কথা বলতে বলেন। সহকারি জাহিদের নিকট জানতে চাইলে অনুমতি ছাড়া দেওয়া যাবে না বলে সাংবাদিকদের জানান। অবস্থা দৃষ্টান্তে মনে হলো তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব অথবা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী যে তার মোবাইল নং সাংবাদিকদের জানার অধিকার নাই। পরের দিন বৃহস্পতিবার জেলা সাব রেজিস্টার রিপন মুন্সির মোবাইল নং জোগাড় করে তার নিকট একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর আব্দুল বিশ্বাস এর নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান সাব রেজিস্টার এর সঙ্গে কিসের কথা? কথা বলা যাবে না। যা বলার আমাদের সঙ্গে বলতে হবে। সমিতির সভাপতির দায়িত্বে থাকা ইকবাল হোসেনকে দেখা না পেয়ে তার মোবাইল নং ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন দলিল লেখক জানান সাংবাদিক দেখে তারা কেটে পড়েছে। তবে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে থাকেন বলে জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন