এক রহমান :
দুপুরের পর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আসলাম। উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম। প্রশ্ন করলাম কি হয়েছে? সহকর্মী সাংবাদিকরা বললেন, আদালতের নির্দেশে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১০৯ জন সাংবাদিককে প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দিয়ে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছেন।
প্রকাশিত তালিকায় অনেককেই প্রেসক্লাবের সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অপরিচিত, আনকোরা ৪৭ জনকে নতুন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে প্রেসক্লাবের অতীশিপর (সিনিয়র) সদস্যদের বাদ দেওয়া হলো? আবার কিভাবে? প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের কোন ধারায় নতুনদের সদস্যপদ দেওয়া হলো?
যতদূর জানি, সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জাজ আদালত প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সমুন্নত রেখে সদস্যপদ প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের ৪-এর (১) ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে সদস্যপদ পেতে হলে তাকে আবেদনকারীকে সাংবাদিকতায় কমপক্ষে এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আবেদন পত্রের সাথে প্রকাশিত সংবাদের বিগত ছয় মাসের কমপক্ষে নিজ নামে প্রকাশিত (বাই লাইন) ১২টি সংবাদের পেপার কাটিং সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। কিন্তু পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ ধরণের আবেদন কি পেয়েছেন? পেলে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কতটি আবেদন পেয়েছেন?
সাংবাদিকদের কেউ কেউ বললেন, নতুন সদস্যপদ প্রদানের ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের ধারা প্রতিপালন হয়নি। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি একটি পত্রিকার সম্পাদক ও এজেন্টের তালিকা অনুয়ায়ি অধিকাংশ নতুনরা প্রেসক্লাবের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সদস্যপদ পেয়েছেন বলে অনেকেই মন্ত্রব্য করেন। কাক কখনও কাককে চিনতে ভুল করে না। তদ্রæপ সাংবাদিকরা সাংবাদিককে চিনতে ভুল করবে না।
নতুনদের অধিকাংশ অচেনা। যাদের নতুন সদস্যপদ দেওয়া হলো তারা কি আবেদন পত্রের সাথে ছয় মাসের পেপার কাটিং জমা দিয়েছিলেন? তাছাড়াও দুই দশক ধরে প্রেসক্লাবের সদস্য, একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন তারা গঠনতন্ত্রের কোন ধারায় বাদ পড়লেন?
অবাক হয়ে লক্ষ্য করা গেছে, প্রকাশিত খসড়া তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত, ২০১৩ সালে সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে পতন করতে কবর তৈরি এবং মহাজোট সরকার পতন কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনিও সদস্যপদ পেলেন। ওই রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামির সুপারিশে?
এদিকে, আলোচিত জামাত-শিবিরের তান্ডবে নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা মামলার আসামির অন্যতম আসামির এক ভাইও সদস্যপদ পেলেন! এটিও কি ওই রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামির সুপারিশে সম্ভব হয়েছে? সব মিলিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সংকট থেকে গভীর সংকটে পতিত হলো। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
s